ব্যবসা আইডিয়া

স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া ও মার্কেটিং করার কৌশল জেনে উদ্যোক্তা হোন

ব্যবসা আইডিয়া: আপনি কি ব্যবসা করার কথা ভাবছেন? কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন তার সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না? ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। তবে আজকের লেখাটি আপনার ভয়কে জয় করতে শেখাবে। সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য এশিয়ার বেস্ট Leadership Consultant ড. ভিভেক ভিন্দ্রার রিসার্চ থেকে ভিডিওটি অনেক গবেষণা করে বানানো হয়েছে।

শুরুতে থাকবে মার্কেট রিসার্চ এবং শেষ অব্দি তুলে ধরব বড় বড় কোম্পানিগুলোর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণ, যা আপনার বিজনেসকে সঠিক পথ দেখাতে পারে।

মার্কেটিং করার কৌশল

প্রথমেই মার্কেট রিসার্চ সম্পর্কে কিছু ধারণা নেয়া যাক- Types Of Market and Elaboration:

i) Value for money market- Good quality but Low price

এই মার্কেটে অল্পদামে ভাল মানের পণ্য বিক্রি করা হয়। যেমন একই কনফিগারেশনের Hp ও Asus ল্যাপটপ এর দাম Apple laptop এর চেয়েও কম। কিন্তু মান ভাল।

ii) Opportunistic Market- High price but Low quality

এই মার্কেট প্রায় অস্থায়ী এবং কোয়ালিটি এর দিকে খেয়াল রাখে না। ভাল হলে আপনার ভাগ্য বলা চলে। যেমনঃ রেলওয়ে, ফুটপাতে, সিনেমা হলে, দোকানে যেখানে ক্রেতা প্রচুর কিন্তু নিত্যনতুন আপডেট হয়।

iii) Chinese goods market- Low price and Low quality

নাম শুনে হয়তো অনেকে বুঝে গেছেন। চাইনিজ পণ্যে বাজার তো প্রায় ঢেকে বসেছে। এই মার্কেটগুলো বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার মতো নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষের NeedAspirational value পূরণ করে। মার্কেট চাহিদা সবসময় উচ্চে, যদিও মানুষ জানে
কোয়ালিটি সন্দেহজনক।

iv) Premium market- High prize and High quality

এ মার্কেটের পণ্যের কোয়ালিটি ও দাম দুটোই চড়া থাকে। সাধারণ মানুষেরা এটাকে Aspirational value হিসেবে দেখে। যেমনঃ Iphone মার্কেটে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যই হলো কম সংখ্যক মার্কেটে বড় Gross Margine এর সাথে পণ্য একটি নির্দিষ্ট চড়া দামে বিক্রি করা।

মার্কেটিং করার কৌশল

এতক্ষণ যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তা মনে হয় যারা নতুন উদ্যোক্তা আছেন, তারা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন-আসলে বিজনেস শুরু করার আগে আপনাকে দেখতে হবে- Actual Target Audience এর সাথে Actual Target কোনটা?

টার্গেট মার্কেট থেকে যদি প্রতিটি আলাদা কোয়ার্ডেন্ট যেতে চান তবে গোলযোগটা তখনি বাধবে, হয়তো আপনার Target audience আপনার মার্কেট এর জন্য টার্গেটেড হতে পারে, কিন্তু অন্য মার্কেট এর জন্য না, তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আলাদা ব্রাণ্ড ও আলাদা প্লাটফর্মে কাজ করতে হবে।

এবার আসি পৃথিবী বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর ব্যর্থতার গল্প নিয়ে- যাদের ব্যর্থতার কারণগুলো আপনার চোখে আঙ্গুল দিয়ে সফলতার পথ দেখাবে।

নতুন পণ্য উন্নয়ন কৌশল

বিশ্ববিখ্যাত ফিল্ম ক্যামেরা যার হাত ধরে ডিজিটাল ক্যামেরার উদ্ভব, সেই কোডাক কেনো দেউলিয়া হয়েছিল। George Eastman ১৮৮৮ সালে Kodak প্রতিষ্ঠা করেন।১৮৮০-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর এইটটি পার্সেন্ট মার্কেট শেয়ার দখলে ছিল এই কোডাক এর, যার gross margin ছিল ৮০%। কিন্তু ২০০৩ থেকে এর Strategy কমতে শুরু করে এবং ২০১২ সালে পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে যায়।

সফল সেলসম্যান
কোড্যাক থেকে শিক্ষা

কোনো কম্পানি মার্কেটে কতদিন টিকবে সেটা নির্ভর করে Market Need এর উপর। অর্থাৎ “Your current strenth innovation is realted to market need” আর ঠিক এই ভুলটিই করেছিল কোডাক। তারা মার্কেট এর প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয় নি। তাই বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি হয়েও মার্কেটে টিকে থাকতে পারেনি।

রাশিয়ান আর্মিদের একটি নীতি বাক্য ছিল- Walking into the battlefield, Before it begins. অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু করার আগে যুদ্ধের ময়দান থেকে ঘুরে আস। তেমনি Business শুরু করার আগে মার্কেটের প্লেসের Strategy জানা আবশ্যক।

বিজনেস টিপস

ডিজিটাল ক্যামেরা প্রথম বানিয়েছিল কোডাক কিন্তু তারা তাদের FilmCamera দিয়ে বিলিয়ন ডলার ইনকাম হওয়ায় এক রকম অন্ধই হয়ে গিয়েছিল। তাই অন্য ব্রাণ্ডগুলো যেমন Fuji, Canon, Sony ভবিষ্যতের কথা ভেবে ডিজিটাল ক্যামেরায় মনোনিবেশ করেছিল?

বিজনেস টিপস

সে সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী Neil J Gunther কে এক ইন্টার্ভিউয়ে কোডাক এর টপ ম্যানেজ সেন্ট জিজ্ঞেস করেছিল যে, আপনি ভবিষ্যতকে কিভাবে দেখছেন? উত্তরে Gunther বলেছিলেন- আমি ভবিষ্যৎ Digital দেখছি। এই উত্তর শুনে কোডাকের সব লোকেরা বিষয়টা নেগেটিভলি দেখেছিল এবং তারা তাদের Film-Camera এর প্রতিই বলিষ্ট ছিল।

সে সময়ের বিখ্যাত ম্যাগাজিন “Forbes” একটি আর্টিকেল লিখেছিল- “পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে আর কোডাক পিছে যাচ্ছে (The world is going forward and Kodak is on the back)। বিষয়টিকে কোডাক খারাপ ভেবে তার কলামে পালটা জবাব দিতে ব্যস্ত হয়েছিল।

এ থেকে বোঝা যায় যে, কোডাক তার Self Praising নিয়ে ব্যস্ত ছিল, যেটা কোম্পানির জন্য মোটেও মঙ্গলজনক ছিল না। এ ধরনের কোম্পানি প্রতিযোগিতা এবং Market intelligence কে অবহেলা করে, যা কোম্পানিকে পথে বসাতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না।

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র

পৃথিবীর সবচেয়ে কমদামী টাটা ন্যানো গাড়ি যার দাম ছিল একটি মোটরবাইকের সমান। Perfect Business এর প্রায় সবকয়টি প্লান Value, Best Price, Quality, Marketing‌ নিয়ে মাঠে নেমেছিল এই কোম্পানি। তবুও কেনো ব্যর্থ হলো?

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র

ভারত এবং বাংলাদেশ এর মত জায়গায় গাড়িকে Aspirational Value হিসেবে দেখা হয়। একজন মানুষকে সফল মানা যায়, তার গাড়ি দেখে। এটা তার অবস্থানকে তুলে ধরে। কিন্তু Tata Nano বিশ্বের সস্তা গাড়ি হিসেবে লোক মুখে প্রচলিত হয়ে পড়েছিল। যেখানে ১ লাখ টাকায় একটি মোটরসাইকেল পাওয়া যেত, সেখানে একই দামে পাওয়া যেত চার চাকার টাটা ন্যানো!

মানুষ ধরে নিয়েছিল যে টাটা ব্যবহার করে তার সামর্থ্য মনে হয় ততটুকুই। ইণ্ডিয়ায় এমনও ঘটেছিল, যে টাটা ন্যানো ব্যবহার করতো তার বিয়ের সম্বোন্ধ পর্যন্ত ভেঙ্গে যেত। আর এভাবেই একের পর এক নেগেটিভ ইমোশনের কারণে টাটা ন্যানো ধীরে ধীরে মার্কেট থেকে হারিয়ে যায়।

তাই আপনি যখন পণ্যের দাম নির্ধারণ করবেন, তখন ভোক্তাদের চাহিদা, অভিরুচি ইত্যাদি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোও জেনে নিবেন। কারণ এ বিষয়গুলো অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা হয়।

ব্যবসার সাফল্য কিভাবে পাওয়া যায়?

এবার আসি সবার পছন্দের ও বিশ্বসেরা মোবাইল ফোন নোকিয়াকে নিয়ে। এক সময় বাঙ্গালিরা আইফোনের স্বাদ নোকিয়া দিয়েই মেটাতো। কারণ নোকিয়া গুণগত মান এবং আকর্ষণীয় ফিচার এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে Aspirational Value তৈরি করেছিল। তবুও কেন জাভা ভিত্তিক নোকিয়া নাম্বার ওয়ান পজিশন থেকে ফ্লোপ খেয়েছিল।

ব্যবসার সাফল্য কিভাবে পাওয়া যায়

উত্তরটি অনেকেরই জানা। হ্যাঁ আমি অ্যাণ্ড্রয়েড এর কথা বলছি। জাভার চেয়ে কয়েকগুণ শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় সব ফিচার এর মধ্যে ছিল। কিন্তু নোকিয়া তাদের নিজস্ব প্লাটফর্ম নিয়ে এতটাই ওভার কনফিডেন্ট ছিল যে তারা মার্কেট নিড এর কথা ভুলেই গিয়েছিল।

জেনেশুনে ভুল করার জন্য বড়সর মাশুল দিতে হয়েছিল নোকিয়াকে। এ থেকে বোঝা যায়, যত বড় ব্রাণ্ডই হোক না কেন, মার্কেট নিড না বুঝলে মানুষ সেটা ছুড়ে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবে না।

নিজের ভুল বুঝতে পেরে নোকিয়া যখন অ্যাণ্ড্রয়েডকে সাথে নিয়ে বাউন্স ব্যাক করল, তখন মানুষ অতি আগ্রহের সাথে সাদরে গ্রহণ করল এবং মার্কেটে সুপার সেল হিসেবে এখনও বহাল।

আজকের এই ব্যবসা আইডিয়া ভিডিওটি থেকে কি শিখতে পারলেন? তা নিজের মতো করে নোট করুন। বিষয়গুলো নিয়ে মার্কেটে এবং অনলাইনে রিসার্চ করুন। আশা করছি বিজনেস সম্পর্কে ভালো কিছু আইডিয়া আপনি আবিষ্কার করে ফেলবেন।

যদি ভিডিও দেখে আপনার এতটুকুও উপকারে আসে, তাহলে ভিডিওটি লাইক, কমেণ্ট এবং সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। আপনার ব্যক্তিগত মতামত জানাতে ও জন স্বার্থে কোন বিজনেস আইডিয়া দিতে ভিডিওটির নিচে কমেণ্ট করুন।

আরও পড়ুন- কিভাবে অলসতা দূর করা সম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *