মানসিক শক্তি

মানসিক শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন

মানসিক শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন: এরকম কি হতে পারে যে আমরা সারা জীবন যুবকই থেকে যাই। ফিজিক্যালি সেটা সম্ভব না কারণ বয়স হলে চুল দাড়ি তো পাকবেই, চামড়া কুঁচকে যাবে এগুলো তো হবেই। কিন্তু সাইকলজিক্যালি অর্থাৎ মনের দিক থেকে কি আমরা চাইলে সারা জীবন যুবক থাকতে পারি? নাকি পারিনা! তো সবার আগে তো এটা ক্লিয়ার করে নেওয়া যাক যে, সাইকোলজিকাল ইয়াং থাকার মানেটা কি?

প্রাকৃতিকভাবে ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই কিছু নিয়ে ভীষণ কৌতুহলী থাকি। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন আমরা বড় হতে শুরু করি তখনই একটা ডায়লগ ‘আরে এই সব আমার জানা আছে’। আস্তে আস্তে প্রতিটা জিনিসের প্রতি আমাদের মধ্যে থেকে কৌতুহল জিনিস টাকে নষ্ট করে শুরু করে। আর সেটাই আমাদের সাইকোলজিক্যালি বৃদ্ধ করে তোলে। আমার সব জানা আছে এই ভুল ধারণাটাই আমাদের মধ্যে কিউরিসিটি জিনিসটাকে দিন দিন মেরে ফেলে।

জানুন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করুন

একই ধরনের একটা গোলাপ ফুল একটা আপনার সামনে আর একটা ছোট্ট বাচ্চা্র সামনে এনে রাখা হলো। যে বাচ্চাটা এটাও জানে না যে ওটা একটা ফুল। তো প্রাকৃতিকভাবেই বাচ্চাটা ফুল এর ব্যাপারে ভীষণ কিউরিয়াস থাকবে। ও হয়তো ফুলটাকে হাতে নিয়ে দেখবে, গন্ধ শুঁকে দেখবে।

মনের ভীতি দূর করা

কিন্তু এই একই ফুল টা দেখে আপনি কি বলবেন! আরে এটা তো গোলাপ ফুল। এটার রং লাল। গন্ধও খুব সুন্দর। এই ফুলের ব্যাপারে আমার সব জানা আছে। কিন্তু সত্যি কি আপনি ফুলটার ব্যাপারে সবকিছু জানেন? ক্ষয়েরই মাটিতে জল মিশে লাল রঙের এই ফুল টা ঠিক কিভাবে তৈরি হচ্ছে! এই সুন্দর গন্ধটা কেন আসছে এই ফুল টা থেকে! এরকম কত কিছু আছে যা ওই ফুলটার ব্যাপারে আপনি এখনো জানেন না।

হয়তো ফুলটার ব্যাপারে পয়েন্ট ওয়ান পারসেন্ট আপনি জানেন। শুধু ফুলটার কি রং, কেমন গন্ধ আর কি নাম। কিন্তু আপনি সেটাকেই ধরে নিয়েছেন যে আপনি ফুলটার ব্যাপারে সবকিছু জানেন। এরকমই ভুল ধারণা গুলো কে সত্যি বলে ধরে নেওয়াতেই আমাদের মধ্যে থেকে সেই ছোটবেলাটা, সেই কৌতুহলী মনোভাবটা, সেই নতুন কিছু জানার, নতুন কিছু শেখার ইচ্ছাটা দিন দিন হারিয়ে যেতে থাকে।

এই যে ফুলের নাম, রং, গন্ধ এগুলো কি? জাস্ট কিছু ইনফরমেশন। যেটাকে আমরা নলেজও বলি। এখনতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর যুগ। এই একই ইনফরমেশন গুলো যদি কোন রোবট এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেই রোবটটাও একটা গোলাপ ফুল দেখে চিনে নেবে।

লাইফ আসলে কি সেটা বুঝতে পারাটা কি নিজের লাইফ এর প্রধান উদ্দেশ্য বানাবেন। সমস্যাটা কি হচ্ছে আমরা নলেজকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বলে ভুল করছি। উদাহরণস্বরূপ ভালোবাসা কি সেটা ব্যাপারে এখানে ওখানে বিভিন্ন বইয়ে ইন্টারনেটে সব জায়গায় কত কিছু লেখা আছে।

সেই সব ইনফরমেশন যদি আপনি নিজের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেন, তাহলেও কি আপনি এটা একচুয়ালি বুঝতে পারবেন ভালোবাসা সত্যিই আসলে কি! যতক্ষণ আপনি নিজে ভালোবাসার জিনিসটাকে এক্সপিরিয়েন্স না করছেন।

দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপনাকে অবশ্যই দেখার ধরণ বদলাতে হবে। যে ভালোবাসা মানে দুঃখ বা সুখ বা মিষ্টি যাতনা এই সব ইনফমেশন সব ছেড়ে দিয়ে যখন আপনি নিজে ভালোবাসাটাকে অ্যাজ ইট ইউ দেখবেন। ঠিক যখন একজন সাইনটিস্ট কোনো এক্সপেরিমেন্ট করার সময় সম্পূর্ণ আন বায়াস থেকে জিনিসটাকে অ্যাজ ইট ইজ পর্যবেক্ষণ করেন ঠিক তখনই কেবল আপনি সত্যিই ভালোবাসা জিনিসটা কি তা এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন।

সাহসী হবার উপায়

তার জন্য আপনাকে পূর্বের সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গির বোঝা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। তবেই আপনি একমাত্র আন বায়াস থেকে কোনো কিছুকে অ্যাজ ইট ইজ এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপঃ একজন মেয়ে রয়েছে। যার স্বামীর সাথে প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি হয়। অন্যদিকে সেই মেয়েটিই আবার তার বাবার ভীষণ প্রিয়। তো সেই একই মেয়েটি তার স্বামীর পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে অন্যরকম অর্থাৎ ভীষণ নেগেটিভ। অন্যদিকে তার বাবার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে সম্পূর্ণ অন্যরকম ভীষণই পজেটিভ।

তো এর মধ্যে কোনটা সত্যি? কারণ মেয়েটির স্বামী যখন মেয়েটিকে দেখছে তখন এতদিন অব্দি মেয়েটার সম্পর্কে তার যা বাজে এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে দেখছে। অন্যদিকে মেয়েটির বাবা দেখছে তখন যত ভালো মেমোরিজ রয়েছে সেই ভিত্তিতে দেখছে। তো দুটোই বায়াস্ট পয়েন্ট অব ভিউ।

আসলে মেয়েটি কেমন? সেটা তো কেউ দেখছেই না। কারণ কেউ আনবায়াস্ট হয়ে মেয়েটিকে দেখছেই না। সবাই যার যার মেমোরির থ্রূতে মেয়েটিকে দেখছে। ফলে সেই সেম মেয়েটি আলাদা আলাদা মানুষের কাছে আলাদা আলাদা স্বভাবের লাগছে।

নিরপেক্ষ জায়গা থেকে দেখতে শিখুন

সোস্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই দুই দেশের কিংবা দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে লড়াই ঝগড়া দেখা যায়। দুজন দুজনকে আদৌ চেনেও না, জানেও না উলটো দিকের মানুষটা আসলে কেমন! কিন্তু তবুও মাথার মধ্যে কিছু বিশ্বাস যখন স্ট্রংভাবে গেথে গেছে সেটার ওপর বেস করে আমরা এটি করে থাকি।

মনোবল দৃঢ় করার উপায়

কিন্তু সবার আগে আমরা সবাই যে একই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ সেই আসল সত্যিটাকে অ্যাজ ইট ইজ না দেখে লড়াই ঝগড়া করতে শুরু করে দেয়। এই লড়াই ঝগড়া করে অ্যাজ এ নেশন বা অ্যাজ এ রিলিজিয়ন আমাদের সম্মান বাড়ে নাকি কমে যায়! আমরা কি নিজেকে ভালোবাসার দূত হিসেবে প্রকাশ করতে চাই।

নাকি ঘৃণার দূত হিসেবে প্রকাশ করতে চাই। এই ঘৃণার সোর্সটা কি? কোনো না কোনো ইনফমেশন বা হয়তো কোনো একটা বাজে এক্সপেরিয়েন্স। যেমনঃ লাইফে প্রথমবার ব্রেকআপ এর পর অনেকেই এটা ধরে নেয় যে, পৃথিবীর সবাই বিশ্বাসঘাতক।

তো এরকম কিছু খারাপ এক্সপেরিয়েন্স বা ইনফরমেশনগুলোকেই যখন আমরা সারাজীবনের জন্য সত্যি বলে ধরে বসে পড়ি, নতুন করে জানার ইচ্ছা বা কৌতুহলটাকে মেরে ফেলি, ঠিক তখনই সাইকোলজিক্যালি আমরা বৃদ্ধ হতে শুরু করি। মানসিক শক্তি নষ্ট হতে শুরু করে।

যেকোন সমস্যা সহজভাবে মেনে নিন

আর ভালোবাসার সোর্সটা কি? যেটা এই মহুর্তে সত্যি – সেটাকে অ্যাজ ইট ইজ দেখা। উদাহরণস্বরূপঃ অঞ্জলির কাছে প্রথম ভালোবাসায় ধোকা খেয়ে ব্রেকাপের পর আজ আবার নতুন করে রিয়ার সাথে রিলেশনশিপে গেল। এবার যদি রাজ রিয়াকে নিজের মেমরির থ্রূ সব সময় রিয়াকে দেখতে থাকে তাহলে ও কি কখনো রিয়াকে পুরোপুরি মন থেকে ভালবাসতে পারবে। না!

অবচেতন মনের শক্তি

কারণ রিয়া যখনই এরকম কিছু করবে যেটা অঞ্জলিও করতো রাজের হয়তো মনে হবে রিয়াও অঞ্জলির মতোই আজকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু রাজ যদি ওর মাথায় পাস্ট রিলেটেড যা যা ইনফর্মেশন ফ্রীডেট রয়েছে সেগুলোকে সব ছেড়ে দিয়ে এই মুহূর্তে অ্যাজ ইট ইজ রিয়াকে দেখে তবেই একমাত্র রাজ রিয়াকে পুরোপুরি মন থেকে ভালবাসতে পারবে বা রিয়ার ভালোবাসাটাকে ফিল করতে পারবে।

কারণ যখন আমরা কোনো কিছুকে সম্পূর্ণ আনবায়াস্টভাবে নিজের মেমোরির থ্রূতে না দেখে সেটা এই মুহূর্তে কেমন সেটা অ্যাজ ইট ইজ দেখি তখনই একমাত্র সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে যেটা বোঝায় সেটা আমরা ফিল করতে পারি। যেমনঃ কারো চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়া, যখন অতীত বা ভবিষ্যৎ কিছুই মাথায় আসে না সেই মুহুর্তেই আমরা একমাত্র সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে যেটা বোঝায় সেটাকে এক্সপেরিয়েন্স করতে পারি।

তাই সাইকোলজিক্যালই সারাজীবন ইয়াং থাকতে হলে তার একটাই উপায়। নিজের মধ্যে নতুন কিছু জানার, সমস্ত কিছুকে নতুন ভাবে যেন সেটা লাইফে প্রথমবার এক্সপেরিয়েন্স করছি এই ইচ্ছাটাকে সব সময় নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা।

যেমনঃ সন্দীপ স্যার (ভারতের বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার) বলেছেন, “Stay curious, stay facinated, stay young”. এই জিনিসগুলো আমি সন্দীপ স্যারের ‘Stay 18 forever’ ভিডিওটা থেকে শিখেছি। যারা হিন্দি ভালো বোঝেন না তাদের জন্য এবং ভিডিওটির মূল কথা গুলো অল্প সময়ের মধ্যে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আমার এই আর্টিকেলটি লেখা।

আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি আর্টিকেলটি আপনার জীবনের সমস্যা সমাধানে এতটুকুও উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন- আত্মবিশ্বাসী হওয়া মানসিক শক্তির মানুষ হয়ে মনের সাহস বাড়ান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *