জীবনে সফল হওয়ার উপায়

জীবনে সফল হওয়ার উপায় – How To Become Successful In Life

জীবনে সফল হওয়ার উপায় – How To Become Successful In Life: আপনি নিশ্চয়ই জানেন, প্রতিটি পদার্থ অসংখ্য ছোট ছোট পরামাণু নিয়ে তৈরি। আর এই ছোট ছোট পরামাণুরগুলোর বৈশিষ্ঠ্যই এক সংঙ্গে মিলে ওভার অল সেই পদার্থটির বৈশিষ্ঠ্য নির্ধারণ করে। একই ভাবে যদি আপনি নিজের জীবনটাকে লক্ষ করেন, তো সেটা অসংখ্য হ্যাবিট অর্থাৎ অভ্যাস নিয়ে তৈরি। তাই এটোমিক হ্যাবিটগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রা এমনকি ‘Overall Quality of Life’ কে নির্ধারণ করে।

যেহেতু এই অভ্যাসগুলো ভীষণই ছোট ছোট, হয়তো আপনি নাও উপলদ্ধি করতে পারেন যে এগুলো আসলে কতখানি শক্তিশালী। যদি প্রতিদিন রিপিট করা হয় তবে একটা ছোট্ট কর্মকাণ্ডও, যেমন প্রতিদিন দশটাকা করে সেভ করা, অথবা প্রতিদিন একটা করে সিগারেট খাওয়া, দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকলে অনেক বড় একটা ইফেক্ট তৈরি করার ক্ষমতা রাখে।

তাই যদি আপনি নিজের অভ্যাসগুলো একবার কন্টোল করতে শিখে যান তবে আপনি আপনার পুরো জীবনটাকেই নিজের কন্টোলে নিয়ে চলে আসতে পারবেন। তো আজকের এই ভিডিওতে আমি ‘James Clear’ এর লেখা বই ‘Atomic Habits’ থেকে কিছু এরকম স্মার্ট আইডিয়া শেয়ার করতে চলেছি যাতে একটা প্রাকটিক্যালি প্রুভেন পদ্ধতি ফলো করে আপনি নিজের মধ্যে ভালো অভ্যাসগুলোকে গড়ে তুলতে পারেন এবং খারাপ অভ্যাসগুলোকে ছাড়তে পারেন। আজকের এই ভিডিওতে বিভিন্ন সাইন্টিফিক রিসার্স এবং রিয়াল লাইফ উদাহরণের মধ্য দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন, ‘কিভাবে নিজের অভ্যাসগুলোতে খুব ছোট ছোট পরিবর্তন এনে, যে কোনো অভ্যাসকে আয়ত্তে আনা সম্ভব এবং জীবনে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।

তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ১: Small habits can have big impact on your life

ভাবুন, একটা প্লেন Los Angeles থেকে New York পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে রওনা দিল। এবার টেক অফ করার সময় সেই প্লেনের পাইলট যদি প্লেনের মুখটাকে মাত্র ৩.৫ ডিগ্রী দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে নেয় তাহলে প্লেনের মাথাটা হয়তো মাত্র কয়েক ফুট বাঁকবে। প্লেনের বাইরে থেকে বা ভিতরে বসা কোনো যাত্রীও সেই ছোট্ট পরিবর্তনটা দেখতেও পারবে না।

কিন্তু দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌছানোর সেই লম্বা যাত্রায় সেই ছোট্ট পরিবর্তনটাই একটা বিশাল ইফেক্ট তৈরি করে ফেলবে। কেননা, প্লেনটা নিউ ইয়র্ক এ ল্যাণ্ড করার বদলে ওয়াসিংটন ডিসিতে গিয়ে ল্যাণ্ড করবে। আমরা ছোট পরিবর্তনগুলোকে ওত গুরুত্ব দেই না। কারণ সেগুলোর ইমিডিয়েট ইমপ্যাক্ট ভীষণই নেগলেজিবল হয়। যদি আজকে আপনার বডি ‘Out of shape’ অবস্থায় থাকে তো কালকে ২০ মিনিট জগিং করে আসার পরও সেটা ‘Out of shape’ ই থাকবে।

একইভাবে আজ যদি ডিনারে আপনি একটা বড় সাইজ পিজ্জা একাই খেয়ে ফেলেন তবে এক রাতে আপনার ওজন বেড়ে ওভার ওয়েট হয়ে যাবেন না। কিন্তু এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই যদি আপনি দিনের পর দিন প্রতিনিয়ত করতে থাকেন তাহলে সেটা কমপাউন্ডেড হয়ে একটা বিশাল বড় ফলাফল তৈরি করবে। একবছর ধরে রোজ রাতে একটা করে পিজ্জা খান তারপর আপনি হয়তো ওভার ওয়েট হয়ে পড়বেন।

প্রতিদিন ২০ মিনিটের জন্য জগিং এ যাওয়া কন্টিনিউ করুন। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো আপনি আরো রোগা এবং ফিট হয়ে উঠবেন। যদিও এতো বড় পরিবর্তন যে কখন হয়ে যাবে তা আপনি টেরও পাবেন না। যদি আপনার লাইফে একটা পজিটিভ চেঞ্জ আনতে চান তাহলে আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে পরিবর্তন আনতে হলে দরকার ধৈর্য্য এবং নিজের প্রতি কনফিডেন্স। যে আপনার অভ্যাসগুলো আপনাকে সঠিক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও কোনো ইমিডিয়েট ভিজিবল রেজাল্ট আপনি নোটিস করতে নাও পারেন।

তাই যদি আপনার কখনো মনে হয়, ভালো অভ্যাসগুলো থেকে আপনি কোন ভালো ফলই লক্ষ করতে পারছেন না। তাহলে তখন ফল খোজা বন্ধ করে বরং অভ্যাসটা আপনাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেটাকে লক্ষ করুন। যদি আপনার ব্যাংক একাউন্ট এখন জিরো ব্যালেন্স হয়ে পরে আছে। তবে যদি আপনি প্রতি মাসে কিছু করে হলেও অন্তত টাকা সেভ করতে শুরু করেন তবে আপনি বলতে পারেন আপনার অভ্যাস আপনাকে সঠিক এগেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এখন ফলাফলটা খুব একটা বড় মনে না হলেও কয়েক মাস বা কয়েক বছর টানা যদি আপনি এভাবেই এগোতে থাকেন। তবে সেটা একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

একই ভাবে যদি একজন কোটিপতিও তার ইনকামের থেকে বেশি খরচ করতে শুরু করে। তবে হয়তো একমাস থেকে পরের মাসে তার ব্যাংক একাউন্টে পরিবর্তনটা অতটাও চোখে পরবে না। কিন্তু এভাবে দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে একটা সময় পর তাকেও সেই বদ অভ্যাসের মাশুল গুনতে হবে। নিজের জীবনে বড় কোন পরিবর্তন আনার জন্য আপনাকে যে বিশাল বড় কিছু করতে হবে সেটা কিন্তু একে বারেই না। বরং তার বদলে আপনি নিজের অভ্যাসগুলোতে ছোট ছোট পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। যেগুলা বার বার রিপিট করতে থাকায় সময়ের সাথে সাথে যোগ হয়ে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ২: Cue, Craving, Response and Reward is the 4 step habit loop

বাড়ী ফেরার পর যখনই আপনি নিজের অন্ধকার ঘরে ঢোকেন তখন আপনাকে এটা ভাবতে হয় না যে এরপর কি করবেন? আপনি অটোম্যাটিক লাইটের সুইচটা অন করার জন্য এগিয়ে যান। এটা একটা অভ্যাস। একটা স্বভাব – যেটা আপনি অসংখ্য বার রিপিট করার ফলে এখন আর আপনাকে কিছু ভাবতে হয় না। অটোম্যাটিক এটা আপনি করে ফেলেন।

তো যে কোন অভ্যাসের সূচনা হয় Cue অর্থাৎ কোনো একটা উদ্দিপনা থেকে। যেমনঃ অন্ধকার ঘরে ঢোকাটা আপনার জন্য একটা কিউ এর কাজ করে। যেটা যাতে আপনি দেখতে পান তার জন্য কিছু একটা করার Craving অর্থাৎ ইচ্ছা জাগিয়ে তুলে। আর সেই Craving থেকে মুক্তি পেতে আপনি রেসপন্স করেন কোনো একটা অ্যাকশন নিয়ে। যেমনঃ এই ক্ষেত্রে লাইটের সুইচটাকে অন করে।

এরপর আসে এই প্রসেস এর ফাইনাল স্টেপ যেটা প্রতিটা অভ্যাসের এনকল রিওয়ার্ড। এই ক্ষেত্রে সেই রিওয়ার্ডটা হলো নিজের আশেপাশে কোথায় কি আছে সেটা দেখতে পারায় একটা মাইল রিলিফ অনুভব করা। প্রতিটা অভ্যাসের ক্ষেত্রে এই সেম নিয়মটা ফলো হয়। আপনি কি অভ্যাসগতভাবে প্রতিদিন সকালে চা খান। তবে সে ক্ষেত্রে হয়তো সকালে ঘুম থেকে ওঠাটা আপনার Cue, যেটা এলার্ট ফিল করার একটা ক্রেভিংকে ট্রিগার করে। আর তখন আপনার রেসপন্স হয় বিছানা থেকে উঠে গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে ফেলা। অথবা চা খাবো না আমি, খাবো না আমি চা, এই জাতীয় কিছু বলা। আর তারপর আপনার রিওয়ার্ড হলো এলার্ট অনুভব করা।

তো এবার যেহেতু আমরা বুঝে গেলাম যে, হ্যাবিট ঠিক কিভাবে কাজ করে? তো চলুন এবার দেখে নেই, এই নলেজটাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আমরা ভালো অভ্যাসগুলোকে গড়ে তুলতে পারি এবং খারাপ অভ্যাসগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৩: Control cues to control your habits

তিন রকম ভাবে আপনি কোনো Cue কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

নাম্বার ১: Change the environment

একবার ‘Boston Best’ নামে একজন ডক্টর অ্যানিথন্ডাইক চেয়েছিলেন যে তার রোগীদের অজান্তেই কোনোভাবে তাদের ডায়াটারি হ্যাবিটসগুলোকে ইম্প্রুভ করতে। তো তিনি করলেন, তিনি হসপিটাল ক্যাফেটরিয়াকে নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আগে ক্যাশ কাউন্টারের পাশের ফ্রিজে শুধু মাত্র সোডা রাখা থাকতো। থন্ডাই কি করলেন? শুধু সেখানেই না আশেপাশে হাতের নাগালে সব জায়গায় সোডার বদলে জলের বোতল রেখে রিপ্লেস করে দিলেন।

পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সোডার বিক্রিতে ১১% ড্রোপ এবং জলের বিক্রি ২৫% বেশি দেখা গেলো। তার রোগীরা হেলদিয়ার চয়েস নিচ্ছিলো। কারণ, পিপাসা মেটানোর জন্য সোডার থেকে বেশি জল তাদের হাতের কাছে ছিল। তো আমাদের আশেপাশের ছোট পরিবর্তনও আমাদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

প্রতিনিয়ত গিটার প্রাকটিস করতে চান। গিটারটাকে ঘরের মাঝখানে কোন একটা স্টাণ্ডে দাড় করে রেখে দিন। বিস্কিট, চিপস এসবের বদলে বেশি করে ফল খেতে চান। তাহলে খাওয়ার টেবিলের ওপর হাতের কাছে একটা ঝুড়িতে ফলগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন।

যতটা সম্ভব কিউগুলোকে চোখের সামনে রাখতে চেষ্টা করুণ। দেখবেন, সেগুলার প্রতি আপনার অটোমেটিক রেসপন্স বেড়ে যাবে।

নাম্বার ২: Make a detail action plan

শুধু মাত্র মুখে বলা এখন থেকে আমি হেলদি ডায়েট মেনে চলব, তা কিন্তু যথেষ্ট না। যদি আপনি সত্যি সেটা ফলো করতে চান, তবে তার জন্য আপনাকে আগে একটা ডিটেইল একশন প্লান রেডি করতে হবে। ঠিক কবে থেকে, কিভাবে আপনি সেটাকে ইম্পিলিমেন্ট করবেন সেই পুরো প্লানটা ডিটেইলসে বানিয়ে ফেলতে হবে। তাই, দেখি কাল থেকে তাহলে দৌড়াতে যাবো। এরকম না বলে একজ্যাক্টভাবে মন স্থির করুন যে সোম, বুধ, শুক্র করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সবার আগে আমার প্রথম কাজ হবে দৌড়াতে যাওয়া। আর তারপর আপনার রানিং সু টাকে চোখের সামনে কোথাও একটা রেখে দিন। এভাবে একটা ক্লিয়ার প্লান এবং ভিজিবল কিউ এর সাহায্যে এই কঠিন অভ্যাসটাকেও আপনি খুব সহজে নিজের মধ্যে ডেভেলপ করতে পারবেন।

নাম্বার ৩: Use habit stacking method

হয়তো আপনি রোজ মেডিটেশন করার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে চান। কিন্তু কিছুতেই সময় খুজে পাচ্ছেন না। তো এরকম ক্ষেত্রে আপনি ‘habit stacking method’ টা ব্যবহার করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন – আপনি প্রতিদিন সকালে চা খান। তো এটা আপনার একটা Existing habits. তো প্রতিদিন সকালে চা খাওয়ার ঠিক পরেই আপনি মেডিটেশন করবেন বলে ঠিক করলেন। অর্থাৎ চা খাওয়ার Existing habit টা ঠিক উপরেই মেডিটেশন করার হ্যাবিটটাকে স্ট্যাক করে দিন। এভাবে একটা ন্যাচেরাল মোমেন্টাম তৈরি করে আপনি মেডিটেশন করার অভ্যাস গড়ে তোলার কাজটাকে অনেকখানি ইজি করে তুলতে পারবেন।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৪ : Reward yourself cleverly to a tick to any habit

১৯৫৪ সালে নিউরো সাইন্টিস James Olds and Peter Milner ডিজায়ারের নিউরো লজি টেষ্ট করার জন্য একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। তারা ইলেক্ট্রোডের সাহায্যে কয়েকটা ইদুরের ব্রেনের মধ্যে ডোপামিনের ক্ষরণ বন্ধ করিয়ে দেন। দেখা যায়, সেই ইদুরগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছাই মরে যায়। এমন কি খাওয়ার ইচ্ছাটুকুও চলে যায়। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই কিছু না খাওয়ার ফলে সব ইদুরগুলো মারা যায়।

আমাদের মস্তিষ্কেও ডোপামিন হরমোনটি ক্ষরণ হয়। যেটা আমাদের মধ্যেও ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে। যেমনঃ যখন আমরা আমাদের পছন্দের কিছু খাই বা পাবজি খেলি। তখন এই ডোপামিনই আমাদের ভালো অনুভব করাতে থাকে। এই নলেজটাকেই আমরা ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার কাজেও ব্যবহার করতে পারি। রনান বায়ার নামের আয়ারল্যাণ্ডের এক ইঞ্জিনিয়ারিং স্টূডেন্ট এটা জানতো যে তার এক্সারসাইজ করা কতখানি দরকার।

কিন্তু এক্সারসাইজ করতে তার একদমই ভাল লাগত না। কিন্তু সারাদিন বসে নেটফ্লিক্স দেখতে ওর প্রচুর মজা লাগতো। তো রনেন কি করে, সে একটা এক্সারসাইজ বাইক হ্যাক করে সেটা ওর ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করে একটা কোড লিখে এরকম একটা সিস্টেম তৈরি করে ফেলে। যাতে যদি সে একটা সারটেইন স্পিডের উপর এক্সারসাইজ বাইকটায় প্যাডেল করে তবেই ওর ল্যাপটপে নেটফ্লিক্স চালু হবে। এই ভাবে এক্সারসাইজ করা যেটা তার একদমই পছন্দ ছিল না, সেটাকে ওর সব থেকে পছন্দের কাজের সাথে লিংক করে। ঐ এক্সারসাইজটাকেও ওর জন্য একটা মজার অ্যাক্টিভিটি বানিয়ে নিয়েছিল।

এই বুদ্ধিটা আপনার লাইফে এপ্লাই করার জন্য আপনার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কোন দরকার নেই। যদি আপনারও যোগিং করতে একদমই ভালো না লাগে। কিন্ত যদি আপনার পছন্দের শিল্পীর গান না শুনে একদিনও থাকতে না পারেন, তবে আপনি মন স্থির করে নিতে পারেন যে শুধু মাত্র যোগিং করার সময় হেডফোন লাগিয়ে আপনি গান শুনবেন। আর নয়তো না। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো যোগিংটাও আপনার কাছে মজার একটা কাজ হয়ে উঠবে। কারণ ওর সাথে তখন আপনার মাইণ্ডে একটা ভালো অনুভূতি লিংক হয়ে যাবে।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৫: Make use of the 2 minute rule to start the activity

কোনো কাজ করতে যত কম ইফোর্ট দরকার হয় এবং যত বেশি পুরষ্কার পাওয়া যায়। সেই কাজটা আমরা তত সহজে বারবার রিপিট করে অভ্যাসে বদলে ফেলি। যেমনঃ ফেসবুক স্ক্রল করতে ভীষণই কম ইফোর্ট দিতে হয়। কিন্তু রিওয়ার্ড সেই তুলনায় বেশি মেলে। তাই ফেসবুক স্ক্রল করার অভ্যাসটা চট করে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু রোজ দশটা করে পুশআপ দিতে বা টেন পেজ করে বই পড়তে অনেক বেশি ইফোর্ট এর প্রয়োজন পরে।

কিন্তু তুলনামূলকভাবে তৎক্ষণাৎ রিওয়ার্ড ভীষণই কম মেলে। তাই এই অভ্যাসগুলো সহজে ডেভেলপ করা সম্ভব হয় না।

তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে এক্সারসাইজ করা বা বই পড়া এই কাজগুলোকে যতটা সম্ভব ইফোর্ট লেস করে তোলার। এজন্য ‘Two Minute Rule’ আপনাকে অনেকখানি সাহায্য করবে। রোজ দশটা করে পুশ আপ দিতে চান। ওকে, তা হলে রোজ একটা করে দেওয়া থেকে শুরু করুন। রোজ ১০ পাতা করে বই পড়তে চান। ওকে, রোজ ১ পাতা করে পড়তে শুরু করুন। যাতে কাজটা শেষ করতে দু মিনিটের বেশি সময় না লাগে। এতে কঠিন কাজটাও আপনার অনেক খানি সহজ বলে মনে হবে। এভাবে কয়েকদিন করার পর হয়তো একটা পুশ আপ দেওয়ার পর আপনার আর একটা পুশ আপ দিতে ইচ্ছে করবে। অথবা একটা পেজ পরার পর আর একটা পেজ পড়তে ইচ্ছা করবে। মনে রাখবেন, যেকোন কাজের সব থেকে কঠিন ধাপটা হলো সেই কাজটা করতে শুরু করা।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৬: Make your habits somehow immediately satisfying

আপনি আজকে অফিস গেলে মাসের শেষে পে চেকটা হাতে পাবেন। একইভাবে আপনি আজকে জিম এ গেলে কাল সকালেই আপনার ওজন কমে যাবে না। যদিও আমরা মানুষটা এভাবেই বিবর্তিত হয়েছি, যে আমরা সবসময় তৎক্ষণাৎ রেজাল্টটাকেই গুরুত্ব দিই। এর কারণ আমাদের পূর্বপুরুষের রিটায়ারমেন্ট এর জন্য লং টাইম সেভিংস করা বা হেলদি থাকার জন্য ডায়েট মেইনটেইন করা এগুলোর কোনটাই করতেন না। তাদের কাছে সেই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের পরবর্তী খাবারটা যোগার করা। আর অন্যান্য জীবজন্তু দের হাত থেকে নিজের প্রাণ বাঁচানো। এই ইমিডিয়েট রিটার্নের ট্রাপে পরেই আমরা প্রচুর বদ অভ্যাস তৈরি করে ফেলি।

আজকে একটা সিগারেট খেলে আজকেই আপনার ল্যান্স ক্যান্সার হয়ে যাবে না। হয়তো বিশ বছর পর গিয়ে সেটা দেখা দেবে। কিন্তু এই মূহূর্তে সিগারেটটা হয়তো আপনাকে সাময়িকভাবে স্ট্রেস কমিয়ে ভালো অনুভুতি জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করছে। যার ফলে আপনি লং টাইম ইফেক্টটাকে ইগনোর করে নির্ভয়ে এই বদ অভ্যাসটাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। তাই যখন কোন ভালো অভ্যাসের ইমিডিয়েট কোন ভালো রিটার্ন নেই তখন সেটাকে চালিয়ে যেতে, নিজেকে মোটিভেট রাখার জন্য আপনি নিজে থেকে সেটার জন্য কোন একটা ইমিডিয়েট ভালো অনুভূতি যোগ করার ব্যবস্থা করতে পারেন ।

উদাহরণস্বরুপ, অথরের চেনা এক দম্পতি ছিলেন। যারা বাইরে খাওয়া কমিয়ে বাড়িতে বেশি রান্না করে একটা হেলদি লাইফ স্টাইল করে তোলার সাথে সাথে টাকা সেভ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইছিলেন। তো এর জন্য তারা কি করে, একটা সেভিংস একাউন্ট ওপেন করে। যেটা তারা নাম দেন ‘Trip to Europe’. আর এরপর যখনই তারা বাইরে খাওয়া এভয়েড করতে সফল হতেন তখনেই তারা ৫০ ডলার করে সেই একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতেন। আর সেই সেভিংস একাউন্টে ৫০ ডলার করে বাড়তে দেখে তাদের যে ভালো অনুভূতিটা হতো সেটা তাদেরকে কন্টিনিউ থাকতে মোটিভেট রাখত।

স্মার্ট আইডিয়া নাম্বার ৭: Make use of habit contracts

ন্যাসবিলের একজন এন্টারপ্রিওনার ব্রায়ান হ্যারিস এই ‘habit contracts methot’ টাকে ভীষণ সিরিয়াসলি নিয়ে নেন। উনি তার ওয়াইফ এবং পারসোনাল ট্রেইনারের সাথে একটা কন্ট্রাক সাইন করেন। তিনি তার ওজন ২০০ পাউন্ডস কমাবেন। আর সেটা করতে তাকে যে হ্যাবিটগুলো সাহায্য করবে, যেমনঃ রোজ তার ফুড ইনটেক ট্রাক করা, প্রতি সপ্তাহে একবার করে ওয়েট চেক করা, এগুলো তিনি কোনরকম মিস না করে কন্টিনিউ করতে থাকবেন বলে সেই কন্ট্রাকে উল্লেখ করেন। আর যদি তিনি কোনোদিন তার ফুড ইনটেক ট্র্যাক করতে ভুলে যান। তবে সেদিন তিনি তার পার্সোনাল ট্রেইনারকে ১০০ ডলার পে করবেন। কিন্তু যদি ওজন মাপতে ভুলে যান তবে তার ওয়াইফকে ৫০০ ডলার করে পে করবেন।

তার এই ট্রিকটা কাজ করে যায়। কারণ, শুধুমাত্র টাকা হারানোর ভয়ে না বরং তার সাথে নিজের কাছের লোকেদের কাছে সম্মান হারানোর ভয়টাও তার মধ্যে চলে এসেছিল। আমরা মানুষ সামাজিক জীব। তাই সম্মানটা আমাদের কাছে একটা বিশাল বড় জিনিস। তাই নিজের সম্মান টাকে বাজিতে লাগালে সেটা আপনার জন্য একটা বড়সড় মোটিভেটারের কাজ করতে পারে।

তো আপনিও চাইলে হ্যাবিট কন্ট্রাক ট্রিকসটা ইউজ করতে পারেন। যদিও সেটা হ্যারিসের মত অত সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার গার্লফ্রেন্ডের বা বেস্ট ফ্রেণ্ড বা কলিগের সাথে নিজেকে বদলানোর বাজি ধরতে পারেন। এতে আপনি অনেক খানি মোটিভেশন এর জোগান পাবেন।

তো এবার যদি আমি এই পুরো ভিডিওটাকে দু লাইনে সাম আপ করি, তো কোনো একটা ছোট্ট পরিবর্তন একদিনে কখনোই আপনার জীবনে বড় কোনো ফলাফল নিয়ে আসতে পারবেনা। কিন্তু এই ছোট পরিবর্তনটাকেই যদি আপনি অভ্যাসে পরিবর্তন করে দিনের পর দিন রিপিট করতে থাকেন। তাহলে সেটা অবশ্যই বড় কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে।

নিজের জীবনটাকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলার জন্য আপনাকে বিশাল বড় কিছু করতে হবে না। ছোট ছোট কয়েকটা জিনিস করুন। যেগুলো বহুদিন ধরে রিপিট করতে থাকার পর একসাথে যোগ হয়ে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

যেমনঃ এই বইয়ের লেখক বলেছেন, ‘Habits are the compound interest of self-improvement.’

সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ, যদি এই পোস্টটা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এখনই আপনার প্রিয়জন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। কারণ এই পোস্টটা যতগুলো শেয়ার হবে আমি বুঝবো তত গুলো মানুষকে আমি সাহায্য করতে পেরেছি।

আরো পড়ুন- ধনী হওয়ার সহজ উপায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *