স্মার্ট ওয়ার্ক

স্মার্ট ওয়ার্ক ও টাইম ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবেন | Smart Work

স্মার্ট ওয়ার্ক ও টাইম ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবেন? এই পৃথিবীতে কেউ ধনী হোক কি গরীব সবাই এক দিনে ২৪ ঘন্টা করে সময় পায়। কিন্তু তাহলে এরকম কেন হয় যে কিছু মানুষ জীবনে অনেক আগে এগিয়ে যায়, যেখানে কিছু মানুষ এই একই জায়গায় সারা জীবন ফেঁসে থাকে। আজ আমি এই ব্যাপারে Rajal Gupta’র লেখা Rajal Neeti টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি থেকে কিছু স্মার্ট আইডিয়াস আলোচনা করব।

কারণ এই বইয়ের লেখক Rajal Gupta নিজের লাইফের টাইম ম্যানেজমেন্ট এর অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করে খুবই কম বয়সে টোটাল ৯টি ডিগ্রী সার্টিফিকেট অর্জন করে ফেলেছেন। যার মধ্যে এলএলবি, জার্নালিজম, পিজিডিপিএ এবং বি-লেভেল এর মত চারটি প্রফেশনাল ডিগ্রীও রয়েছে।

এই বইয়ের বিশেষ ব্যাপার যেটা, সেটা হলো এই বইটিতে প্রচুর রিয়েল লাইফ এক্সাম্পল দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে, কেন আমাদের লাইফে সময় জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে আমরা ইচ্ছা করলে খুব সহজেই আমাদের টাইম কে ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারি?

তো চলুন, এই বইটি থেকে কিছু অসাধারণ স্মার্ট আইডিয়াস দেখে নেওয়া যাক।

আইডিয়া ১ঃ ইউজ ইউর টাইম স্মার্টলি

একটা রাস্তার উপর প্রচুর টাকা পয়সা পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে কিছু ১, ২, ৫, ১০ এর কয়েন রয়েছে। আবার ১০, ২০, ৫০০ এবং ২০০০ এর নোটও রয়েছে। দুজন বন্ধু তাড়াতাড়ি ওই টাকাগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে। যাতে তাদের আগে আর অন্য কেউ ওই টাকাগুলো কুড়িয়ে নিতে না পারে। কিন্তু এর মধ্যে প্রথম বন্ধুটি শুধু কয়েন গুলো কুড়াচ্ছে, যেখানে দ্বিতীয় বন্ধুটি শুধু নোটগুলো।

টাইম ম্যানেজমেন্ট
টাইম ম্যানেজমেন্ট

আপনি কি বলতে পারেন, কোন বন্ধুটি বেশি টাকা কোড়াতে পারবে এবং কোন বন্ধুটি বুদ্ধিমানের কাজ করছে? হ্যাঁ! আপনি ঠিকই বলেছেন, যে বন্ধুটা শুধু কয়েন কোড়াচ্ছে সে হলো এক নম্বরের গাধা এবং যে বন্ধুটা শুধু নোটগুলো কোড়াচ্ছে সে ঠিক ততটাই চালাক।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরাও ওই প্রথম গাধা মার্কা বন্ধুটার মতোই আমাদের লাইফে সময়কে ব্যবহার করি। যেমন ও শুধু কয়েন গুলো কুড়িয়ে গড়ছিল। মানে আমরা আমাদের বেশিরভাগ সময় কম মূল্যবান ফালতু কাজগুলোর পিছনে নষ্ট করে ফেলি। যেখানে আমরা চাইলে আমাদের সময়টাকে মূল্যবান কিছু করার পিছনে খরচ করতে পারি। যাতে আমরা বেশি ভালো এবং লাভজনক ফলাফল পাই।

যেমন ধরুন, যদি আপনি একজন স্টুডেন্ট হন তাহলে আপনার বেশিরভাগ সময় সেই প্রশ্নগুলো মুখস্ত করার পিছনে ব্যয় করা উচিত, যেগুলো থেকে পরীক্ষায় আপনি পেতে পারেন। পরীক্ষায়ও আপনার উচিত সবার প্রথমে সেই প্রশ্নগুলোকেই লিখা যেগুলো আপনি ভালোভাবে পারবেন।

আইডিয়া টুঃ স্টপ ওয়েস্টিং ইউর টাইম

একটি শহরে ৩০ বছর বয়সী দুজন জমজ ভাই থাকে। এই দুই ভাই একদমই একই টাইমে একই ফ্যামিলিতে জন্ম নিয়েছিল। ওদের মা বাবা, ওদের ফেস, সমস্ত কিছু একদম এক। কিন্তু আজ দুজনে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। একজন ভাই ইন্ডিয়ার ভীষণ বিখ্যাত একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়া শেষ করে একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল পজিশনে জব করছে।

যেখানে দ্বিতীয় ভাইটি এখনো একটা ভাল রোজগার করে উঠতে পারেনি। তো এরকম কেন? কারণ দ্বিতীয় ভাইটি ক্লাস টুয়েলভ এর পর আর কোন পড়াশোনা করেনি। সারাদিন আড্ডা মেরে উল্টোপাল্টা লোকেদের সাথে ঘুরে বেরিয়ে সমস্ত সময় নষ্ট করেছে। এরকম ভাবে দেখতে দেখতে কখন যে ১০-১২ বছর পেরিয়ে গেছে সে বুঝতেও পারেনি।

দ্রুত কাজ করা

এবার যখন ৩০ বছর বয়সে এসে পকেটে একটা ফুটো করিও না থাকার কারণে তার হোশ ফিরেছে তখন সে কনফিউজ হয়ে পড়েছে যে, এখন সে কি করবে? ৩০ বছর বয়সে এসে আবার পড়াশোনা শুরু করবে নাকি কোন একটা ছোটখাট কাজে ঢুকে যাবে! আমার বিশ্বাস আপনি এরকম কাউকে না কাউকে নিশ্চয়ই চেনেন, যে এই ২য় জমজ ভাইটির মত যখন কিছু করার সময় ছিল তখন সারাদিন হেসে খেলে আড্ডা মেরে কাটিয়েছে। আর এখন বসে বসে সারাদিন আফসোস করতে থাকে।

বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই যে অন্যের ভুল থেকে শেখে। তাই আমি আশা করি, আপনি নিজের অবস্থা দ্বিতীয় জমজ ভাইটির মত হতে দেবেন না। যে নিজের প্রথমে যখন সময় ছিল তখন সময় নষ্ট করে গেছে। আর তারপর সময়ই ওর পুরো জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।

আইডিয়া থ্রিঃ ফিক্সড ইউর গোল ফাস্ট

একজন লোক ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য একটা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরকম ভাবে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ফাইনালি যখন ওনার পালা এসেছে আর টিকিট কাউন্টারে বসা লোকটা যখন তাকে জিজ্ঞেস করছে যে, উনি কোথায় যেতে চান তখন লোকটা উত্তরে বলছে- আমি জানিনা, আমি কোথায় যেতে চাই?

আপনি হয়তো ভাবছেন, লোকটা গাধা নাকি! যখন জানেই না কোথায় যেতে চায় তখন অত লম্বা লাইনে দাড়ানোর কি মানে! কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের আশেপাশের বেশিরভাগ লোকের অবস্থা ঠিক একই রকম।

আমাদের সমস্যাটা হল আমাদের আশেপাশে যাই কাজ আসে আমরা সেটাকে আগামাথা কিছু না ভেবেই করতে শুরু করে দিই। কোন কাজটা করা উচিত, কখন করা উচিত, কিভাবে করা উচিত, কোন কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া যেতে পারে? এসব কিছুই আমাদের মাথায় আসেনা।

তো ঠিক যেমন কোথায় যাব সেটা ডিসাইড করার পর তবেই আপনি টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়ান ঠিক তেমনি কোন কাজ শুরু করার আগে সেই কাজের ইন্ড গোলটাকে জেনে ফিক্সড করে তবেই কাজটা করতে শুরু করুন।

তারপর মাথা খাটান কিভাবে আপনি কাজটা আরও সহজে আরো কম সময়ে শেষ করতে পারবেন। বেশকিছু রিচার্জ থেকেও এটা জানা গেছে যে, আমরা যদি কোন কাজ শুরু করার আগে ঠিকমতো সেটার প্লানিং করে নেই, তাহলে আমরা আমাদের ৯০% অব্দি টাইম বাঁচাতে পারি।

আইডিয়া ফোরঃ স্মার্ট ওয়ার্ক

একটা কলোনিতে চালাক চেতন এবং ঘাসিতারাম নামে দুইজন কাঠুরিয়া বাস করত। এদের মধ্যে চালাক চেতন সব সময় বেশি বেশি কাঠ কাটত। তাই একদিন ঘাসিতারাম ভাবলো যে, সে এবার থেকে কাঠ কাটার পিছনে বেশি সময় দেবে। যাতে সে চালাক চেতনের থেকে বেশি কাঠ কাটতে পারে। তো প্রথমে সে নিজের কাজের পেছনে একঘন্টা সময় বাড়ালো। কিন্তু তাও সে চালাক চেতনের থেকে কাজে পিছিয়েই রইল।

কাজে মনযোগ

তাই এবার ঘাসিতারাম নিজের কাজের পেছনে দু’ঘণ্টা বাড়ালো। কিন্তু মজার বিষয় হলো এতে সে আগে যতটা কাঠ কাটছিল এখন তার থেকেও কম কাঠ কাটতে পারছিল। তো এর ফলে যথারীতি ঘাসিতারাম হতাশ হয়ে পড়ল। তাই সে ঠিক করল যে, সে এবার সরাসরি চালাক চেতনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে, তার এই কম সময়ে বেশি কাঠ কাটার পিছনের রহস্যটা কি?

পরদিন সকালে গিয়ে যখন ঘাসিতারাম চালাক চেতনের কাছে জিজ্ঞেস করল যে, তার রহস্যটা কি? তখন চালাক চেতন তাকে বলল যে, সে দু’ঘন্টা কাঠ কাটার পর বিশ্রাম নেয় এবং ত্রিশ মিনিট সে তার কাঠ কাটার কুঠারটিতে ধার দেয়। কারণ যখন সে কাঠ কাটতে থাকে তখন তার কুঠার ঠিকঠাক আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

যার ফলে সে যদি ঐ কথাটি দিয়ে একনাগাড়ে কাঠ কাটতে থাকে তাহলে একটা সময় কথাটির ধার এতটাই কমে যাবে যে সে সেটা দিয়ে হয়তো এক ঘন্টায়ও একটা কাঠ কাটতে পারবে না। তো চালাক চেতন স্মার্ট ওয়ার্ক করছিল। যেখানে ঘাসিতারাম হার্ডওয়ার্ক।

আর তার ফলাফল আপনার আমার সবার সামনে স্পষ্ট। ঠিক এরকমই কোন কাজ শুরু করার আগে আপনি যদি সেই ফিল্ডের কোন এক্সপার্ট এর পরামর্শ নিয়ে তবে শুরু করেন তবে আপনিও আপনার প্রচুর সময় বাঁচাতে পারবেন।

এই পদ্ধতি গুলো আমরা আমাদের জীবনে এপ্লাই করে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি ফলাফল পেতে পারি।

আরও পড়ুন- দ্রুত কাজ করার উপায় জানুন অধিক পরিশ্রম না করেও

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *