করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় | লক্ষণ, চিকিৎসা ও সুরক্ষা | Corona Virus

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়: করোনা ভাইরাস এখন সবার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে, আরো বেশি মাথা খারাপ করে দিচ্ছে মিডিয়া এবং গুজব। মাস্ক নিয়ে এখন যে শুরু হইছে তাতে পিঁয়াজের কথা মনে পড়ে গেল। যাক গে সে সব কথা, হুজুগে বাঙ্গালি আরো কত কি করবে সেটা নিয়ে আর নাই বলি, চারদিকে এত ব্যাড নিউজ শুনে অনেক হতাশ হয়েছেন এবার একটা গুড নিউজ দেই- করোনা ভাইরাস সাধারণত সুর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি সহ্য করতে পারে না, মানে বংশ বিস্তার করতে পারে না।

করোনা ভাইরাস নিয়ে অজানা তথ্য

এই ভাইরাস ৪ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং নিম্ন হিউমিডিটি পছন্দ করে। এখন বাংলাদেশ গরম পড়া শুরু হইছে, সূর্যের তাপও বাড়া শুরু হইছে, আর কয়টা দিন পর গরমে তাপমাত্রা অনেক বেশি হবে, যেটা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রাকৃতিক অস্ত্র হিসেবে কাজে দিবে। ২৩ ডিগ্রি কিংবা বেশি তাপমাত্রার দেশে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারবে না। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা কোনো না কোনোভাবে চায়না গিয়েছে অথবা চায়না থেকে আগত কারো দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা দাবি করেছেন, এই সংক্রমণ নিম্নমাত্রার হলেও দেড় কোটি, মাঝারি মাত্রার হলে ৩ কোটি ৮০ লাখ ও বিপর্যয়কর হলে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

তাদের মতে, সংক্রমণে বেশি মানুষ মারা যাবে যেসব দেশে তার মধ্যে রয়েছে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ। নিম্নমাত্রার মহামারী হলে চীন এবং ভারতে কয়েক মিলিয়ন করে মানুষ মারা যাবে। যুক্তরাজ্যে ৬৪ হাজার, জার্মানিতে ৭৯ হাজার এবং ফ্রান্সে ৬০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন।

এই খবর শুনে ভয় পেয়েছেন নিশ্চই, কিন্তু ভয় পেয়ে তো আর কোন লাভ নেই, এটা ডেঙ্গুর চেয়ে ভয়াবহ নয়, কদিন পরে তো আসবে এই ডেঙ্গু। নিশ্চিত মৃত্যু তো হবেই, তবে মশা নিধন পর্যাপ্ত হলে অনেকটা নিস্তার পাওয়া যাবে। যাইহোক করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংকিত না হয়ে একটু ঠাণ্ডা মাথায় করোনায় আক্রান্ত না হওয়ার সাবধানতাবিধি গুলো জেনে নেই ও মেনে চলার চেষ্টা করি।

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে করনীয় কাজ:

১। যে কারো সাথে ১ মিটার দূরে থাকুন। একজন সুস্থ্য আছে ভেবে ভুল করবেন না কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৫ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ প্রকাশ পায়। তাই একটু সাবধান, আড্ডা দেয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখুন।

২। হ্যান্ডশেকিং, হাগিং, কিসিং বন্ধ। বউকে কয়দিন কিস না করলে মরে যাবেন না, বরং কদিন অফ থাকলে মূল্যটা আরো বাড়বে, ক্ষুধা পেট বোঝে খাওয়ার কি আনন্দ।

৩। যারা বডি-স্প্রে ব্যবহার করেন তারা কিছুটা প্রটেক্টিভ, কারণ সেখানে অ্যালকোহল আছে যা ভাইরাস প্রতিরোধী। স্যানিটাইজার বা হান্ডওয়াস নিয়ে এত ব্যস্ত হবেন না, পারলে কিনুন, নইলে ভাল ক্ষারযুক্ত সাবানই যথেষ্ট। স্যানেটাইজারের চেয়ে অধিক কার্যকরী কাপড় কাচা সাবান, বলেছে গবেষকরা।

৪। মাস্ক কেনা নিয়ে এত মাতামাতি করবেন না, মাস্ক ব্যবহার তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা এ রোগে আক্রান্ত এবং তাদের সেবাদানকারী ডাক্তার। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, মাস্ক ব্যবহার করে কোন কাজে হবে না, বরং এটির কারণে আরো বেশি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে, কারণ মাস্ক ব্যবহার করলে অসস্তি লাগে তাই হাত বারবার মুখে চলে যায়, যেটা সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। এই ভাইরাস আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি হাত দিয়েই হয়। তাই মাস্ক নিয়ে টানাটানি না করে, হাত সবসময় পরিস্কার রাখুন।

৫। করোনার টার্গেট আমাদের বাড়ির বয়স্ক মানুষজন। তাদের সেইফ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় না, তাই ৫০ ঊর্ধ মানুষজন একটু বেশি সাবধানে থাকবেন।

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

১। সভা, কনসার্ট, সমাবেশে সহ সকল ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখুন কিছু দিনের জন্য। কারণ ভিড়ের মধ্যে গেলে আক্রান্ত হবার চান্স বেশি। আক্রান্ত ভাইরাস নিয়ে বাসায় আসবেন। আমাদের বাসায় ৫০ এর বেশি বয়স্ক মানুষ আছে। এদের মেজর ডিজিস আছে। করোনার টার্গেট এরা।

২। পকেটে টাকা থাকলেই কেনাকাটা করার অভ্যাস বন্ধ করুন, প্রয়োজনীয় জিনিস কিনুন শুধু। টাকার মাধ্যমে রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। একটি টাকা দিনে ১০ জন মানুষের হাতবদল হতে পারে। কেউ টাকাকে স্যানিটাইজারে ওয়াশ করে না। অটোক্লাভে নেয় না, তাই এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে। চীনে তো কয়েক হাজার কোটি টাকা আগুনে পুড়ে দেয়া হয়েছে। তাই টাকা লেনদেন করলে হাত ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।

৩। করোনা মেহমানদারি খুব পছন্দ করে। কারণ আপনি আক্রান্ত হলে এরা ঘরে আসবে। ঘরের মা-বাবা-দাদা-দাদীর উপর প্রভাব ফেলবে। ঘরে না আনতে- বাইরে কম যাবেন। গেলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।

৪। বাইরে গেলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট (বাস, ট্রেন) যথাসম্ভব পরিহার করবেন। উবার, পাঠাও, বাইক বেটার।

৫। হাত দিয়ে মুখ-নাক স্পর্শ করা পরিহার করার চেষ্টা করুন। হাচি-কাশি আসলে হাতের কনুই দিয়ে নাক ঢাকুন।

৬। যেহেতু ভাইরাস অপরিষ্কার ও নোংরা জায়গা পছন্দ করে, এজন্য ঘর থেকে শুরু করে সব পরিষ্কার রাখুন। বিছানার তোষক, বালিস ইত্যাদি ব্যবহার করা জিনিস যেগুলো ধোয়া যায় না, তা রোদে শুকিয়ে নিন।

৭। ফেসবুকের সব স্ট্যাটাস পড়ার দরকার নাই। বিবিসি, প্রথম আলো, বিডিনিউজ টাইপের অথেনটিক সোর্সের নিউজ ছাড়া বাকীগুলো ইগ্নোর করুন। ভাইরাস সম্পর্কে জানা না থাকলে কোনো স্ট্যাটাস শেয়ার দিবেন না। কয়েকদিন ইউনিসেফের নামে একটা পোস্ট টাইমলাইন, ইনবক্সে ভাইরাল করে ফেলেছে পাবলিক। এই পোস্ট ভুয়া। এতে মানুষজন ভীত হবে।

৮। হাত ধোয়ার সময় দুইহাত দিয়ে একটি আরেকটির উপর নিচ ঘষে ভালভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, তারপর পরিস্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন।

করোনা ভাইরাসের সঠিক তথ্য

এখন পর্যন্ত (১০ মার্চ) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১৩টি দেশ ও অঞ্চল। আর ১ লাখ ১৪ হাজার ৪১৬ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৪ হাজার ২৬ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO বলেছে চীনে করোনা আক্রান্তদের ৭০ ভাগই সুস্থ। চীনে ৮০ হাজারের বেশি করোনা রোগীর ৭০ শতাংশই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। দেশটিতে মহামারি প্রায় শেষের পথে বলেও মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক।

বাংলাদেশে সাপের দংশনে যত মানুষ মারা যায়, তার অধিকাংশই বিষহীন সাপের দংশনে মারা যায়। কারণ রোগী মনে করে, যেহেতু তাকে সাপে দংশন করেছে, আর রক্ষা নাই। সে মরেই যাবে। ভয়ে হার্টফেল করে। সুতরাং ভীত হবেন না। আতংক ছড়াবেন না।

আপনি যদি আপনার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে অনেকটা প্রতিকার পাবেন এই ভাইরাস থেকে। তাই ভীত না হয়ে, গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হোন, আর অন্যকে সচেতন করতে এই ভিডিওটি শেয়ার করুন, এটাই এখন আপনি মানবতার জন্য করতে পারেন, এই ভিডিওটি করার উদ্দেশ্য আপনাদের সচেতন করা। ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। এই কামনা করি। সাথেই থাকুন আমাদের Nisikto Tube চ্যানেলের সাথে।

করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের ভিডিও ডকুমেন্টরি দেখুন-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *