ব্রেন ভালো রাখার উপায়

ব্রেন ভালো রাখার উপায় | Brain Power

ব্রেন ভালো রাখার উপায় কি? যে যত তাড়াতাড়ি শিখতে পারে সে ততবেশি বুদ্ধিমান। বুদ্ধির সংজ্ঞা মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন – মনোবিজ্ঞানী স্টার্ন বলেন – “বুদ্ধি হল নতুন সমস্যা ও অবস্থার সাথে সংগতি বিধানের সাধারণ মানসিক শক্তি।”।

মনোবিজ্ঞানী ক্যাটেল বলেন – “Intelligence is what intelligence does. মনোবিজ্ঞানী ডিয়ারবার্ণ বলেন – “বুদ্ধি হলো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হওয়ার ক্ষমতা।” ভাইভা পরীক্ষায় বা কোনো কথোপকথনে উপস্থিত বুদ্ধি খাটাতে না পেরে লজ্জায় পরেছেন। চিন্তা নেই, যদিও বুদ্ধি বেশিরভাগই জেনেটিকাল

বিষয় তারপরও বুদ্ধি বাড়ানোর নানা উপায় আছে। বুদ্ধির প্রখরতা বাড়াতে নিচের উপায় কয়েকটি অবলম্বন করতে পারেন।

জানার আগ্রহ বাড়ান

মেধা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে না ভেবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ভেবে চিন্তে দিন। যা জানা নেই তার জন্য বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলতে যাবেন না। সিম্পলি Sorry বলুন। কিন্তু অপর জনের কাছে তা শিখিয়ে নিতে ভুলবেন না। নিয়মিত বইয়ের কয়েক পাতা পড়ুন আর পড়তে ভাল না লাগলে অডিও বুক শুনুন। নতুন কোন বিষয় পেলে তা নিয়ে একটু ভাবার অভ্যাস করুন।

মেধা বৃদ্ধির উপায়

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন। অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ পাঠ্যপুস্তক এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বই ছাড়াও পত্রিকা- ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়ুন। বই পড়ার মধ্যে বিনোদনের পাশাপাশি শেখার বিষয় আছে। মস্তিস্ক সচল রাখার ক্ষেত্রে বই পড়ার বিকল্প নেই।যত পড়বেন ততই ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়বে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম যে শুধু ওজন কমায় তা কিন্তু নয়, ব্যায়াম মস্তিস্কের স্নায়ুগুলোকে সক্রিয় রাখে, টেনশন ফ্রি করে, মস্তিস্কে রক্ত চলাচল নিশ্চিত করে এবং সতেজতার সাথে সাথে প্রাণবন্ত রাখে। ব্যায়ামের সময় মস্তিষ্কের সেল থেকে নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর নামক প্রোটিন বের হয়।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যায়াম

এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করে এবং ব্রেনকে রক্ষা করে। এছাড়া ব্যায়ামের সময় নার্ভ প্রকেটটিং কম্পাউন্ড বের হয়ে ব্রেনকে রক্ষা করে। ব্রেন এর hippocampus নামক একটি জায়গা আছে, যা ব্যায়ামের সময় আকারে বড় হয়ে যায়। মানুষের স্মৃতি ভুলে যাওয়া রোগ Alzheimer’s disease প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্রেন সেলগুলো আরও বিকশিত ও শক্তিশালী হয়। আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্ককে ড্যামেজ হওয়া থেকে প্রতিহত করে। তাই ব্যায়াম শুধু শরীর কেই নয় বরং মস্তিষ্ক কেও সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ করে।

ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ আমাদের ব্রেইনে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং মেমরি লস হতে পারে এমন সব অসুখ যেমন- ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ এগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেই সাথে বাড়িয়ে দেয় উপকারি ব্রেণ ক্যামিক্যালগুলোর। মেডিটেশন ও আরো কিছু যোগাসন আছে যা আমাদের ব্রেণ ও নার্ভাস সিস্টেমকে স্টিমিউজেট করে স্মৃতিশক্তি ও মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে কার্যকরী সাহায্য করে।

মেডিটেশন করুন

চিন্তা ও চাপ কমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন। এতে আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। ব্রেন এর কার্যক্ষমতা বাড়ে। চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নিন। আপনার মনকে একীভুত করার চেষ্টা করুন। এজন্য মেডিটেশন ক্যাসেট বা বই পড়ে কিংবা গুগলিং করে উপায়গুলো রপ্ত করুন। ব্রেন ভালো রাখার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন করুন।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে মেডিটেশন

সবসময় চেষ্টা করুন বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে থাকার। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। আর মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলে। মস্তিষ্ক শান্ত ও ফ্রেশ করতে নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। সাথে চাইলে আপনি যোগ ব্যায়ামও করতে পারেন।

আর যদি এসব সম্ভব না হয় তাহলে দিনে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। আপনার এই ছোট্ট অভ্যাসগুলোই আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। সেই সাথে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতাও বাড়ায়।

ব্রেন গেমসগুলো খেলুন

ব্রেণের উত্তেজনা মূলক গেইম যেমন: পাজল, দাবা, ক্রসওয়ার্ড, সুডুকু ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেম খেলুন। এই ধরনের খেলাগুলো মস্তিস্কের শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে। সময় পেলে অবসরে এমনি বসে না থেকে এই গেমস গুলো খেলতে পারেন।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ব্রেন গেমস

আবার ফেসবুকে বা মেসেঞ্জারে এরকম কিছু ব্রেইন গেমস আছে। তাই সবসময় চ্যাট না করে একাকী বা বন্ধুকে ইনভাইট করে খেলুন।

টেলিভিশন কম দেখুন

প্রায় প্রতিদিনই আমরা টেলিভিশনের সামনে নষ্ট করি অনেক মূল্যবান সময়। টিভি দেখা ভালো কিন্তু টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়লে চলবে না। টিভি দেখার চেয়ে বই পড়া অনেক ভালো।

মস্তিষ্কের ব্যবহার

বইয়ে আপনার মনোযোগ স্থির থাকবে কিন্তু টেলিভিশনে তা নাও হতে পারে। অবসর সময়ে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন, গান শুনুন অথবা রান্না করুন। আর টেলিভিশন দেখলেও তা কম আলো দিয়ে এবং দূর থেকে দেখুন।

ভালো করে ঘুমান

প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে আগেভাগেই ঘুমাতে যাবেন ও সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম আপনার ব্রেণ রিফ্রেশ করে শান্ত করে। আমাদের মস্তিস্কের সক্রিয়তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম শরীর ও মনকে ফ্রেশ রাখে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ভাল ঘুম দিয়ে

তাই ব্রেণের উপযুক্ত কাজের জন্য চাই পর্যাপ্ত ঘুম। কোনো বিষয়কে ভাল করে মনে রাখার সাথে রয়েছে ঘুমের সরাসরি যোগাযোগ। গবেষণায় জানা যায়, ‘মেমরি কনসলিডেশন’-এর জন্য উত্তম ঘুম জরুরি। এমনকি দুপুরে আধঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট ঘুমও বেশ উপকারী।

দুপুরের এই নিটোল ঘুম আমাদের ডিকেরাটিভ মেমোরিকে (বইপত্র পড়ে যা জ্ঞান অর্জন করা হয়, সেগুলো মনে রাখা) উসকে দেয়। ফলে আপনি যা শিখেছেন সেটা সহজেই মনে রাখা যায়। দুপুরে ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। তবে জোর করে শেখা কোনো জিনিস কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে সাহায্য করে না এই ঘুম।

সৃজনশীল চিন্তা করুন

প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি করুন। আপনার কাজে সৃজনশীল চিন্তা বজায় রাখুন। পুরনো কাজকে মোডিফাই করে নতুন কোনোকিছুতে পরিণত করুন। এজন্য আপনি ভাল লাগার কাজগুলো করতে পারেন, সেগুলো নিয়ে ভাবতে পারেন।

সৃজনশীল চিন্তা করুন মেধা বাড়াতে

একটি কাজকে অন্য সবাই যেভাবে দেখে আপনি একটু আলাদাভাবে দেখার চেস্টা করুন, নতুন কিছুর সাথে যুক্ত করে। সৃজনশীলতা আপনার ব্রেণকে মূল্যবান করে তুলবে। তাই ব্রেন ভালো রাখার জন্য সৃজনশীল চিন্তা করুন।

ক্রোধ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন

ক্রোধ বা রাগ মানুষের মন ও মস্তিষ্কের বড় শত্রু। আমরা রেগে গেলে আমাদের শরীরে হতে এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যৌগ নিঃসৃত হয় যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই স্মৃতিশক্তির পরিচর্যায় মন থেকে রাগ ঝেড়ে ফেলুন।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন মাথা ঠাণ্ডা

নেতিবাচক চিন্তাগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। সন্দেহপ্রবণ মন আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।। তাই আমাদের উচিত মনের পরিচর্যা করা। সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

একজন ছাত্র ২৫ মিনিটের বেশি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। একজন মানুষ সারাক্ষণ একই কাজ করতে পারে না। একই কাজ বার বার করলে আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর এই ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।

মেধা বিকাশে বিশ্রাম

তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। আপনার প্রতিদিনের ঘুমোনোর রুটিন হোক ৬-৭ ঘণ্টার । দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। এতে কাজ বা পড়ায় আপনার মনোনিবেশ করা সহজ হবে।

স্মৃতিচারণ করুন

ভালো সৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করুন। আপনার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পজিটিভ ঘটনা মনে করুন। পূর্বের ফেলে আসা ভুলগুলো যেন ভবিষ্যতে আর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। পজিটিভ কথা বলুন ও নিজেকে পজিটিভ রাখুন। নিজের ভালো কাজগুলোর জন্য নিজেকে সাবাশি দিন।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান

ব্রেণের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য দরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি ও এনার্জির। ব্রেন ভালো রাখার জন্য এই খাবার গুলো আপনাকে খেতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের শরীরে কিছু অক্সিডেন্ট তৈরি হয় যে অক্সিডেন্টগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার

শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে এমন কিছু খাবার আছে যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রেন হেলথের জন্য খুবই জরুরি উপাদান। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে এমন কিছু মাছ যেমনঃ টুনা, স্যামন, ট্রাউট। ফল (তরমুজ, আম), গ্রিন টি, ব্রকোলি, পালংশাক, লেটুসের মতো সবজি, খাওয়ার চেষ্টা করুন। মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে কার্বোহাইড্রেট খাওয়াও জরুরি।

বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান

রিসার্চে দেখা গেছে, জীবনকে যদি উপভোগ করতে পারেন, তবে তার প্রভাব ‘কগনিটিভ অ্যাবিলিটির’ উপরও পড়ে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বিভিন্ন টপিক নিয়ে কথা বললে আপনার পূর্বের জিনিসগুলো মনে পড়বে। সাথে নতুন কিছু জানতেও পারবেন তাদের কাছ থেকে।

আশপাশের লোকের সাথে কথপোকথন করলে শুধু মন-মেজাজ ভালো থাকে না, ‘ইট ইজ অলসো আ ফর্ম অব ব্রেন এক্সারসাইজ’। সাপোর্ট সিস্টেম থাকাটা শুধু emotional health এর জন্যই নয়, ব্রেণ হেলথের জন্যও জরুরি।

আরো পড়ুন- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় একুপ্রেসার ও মুদ্রা

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে ব্রেন তীক্ষ্ণ করুন

2 thoughts on “ব্রেন ভালো রাখার উপায় | Brain Power”

  1. Md Ismail Hossain

    সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটে এমন কিছু বললে ভালো হয়,,,,?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *