মেসির জীবন কাহিনী

বস্তির ছেলে লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী থেকে অনুপ্রেরণা

মেসির জীবন কাহিনী: আমাকে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছিল যখন আমি আর্জেন্টিনা ছেড়ে, আমার পরিবার ছেড়ে একটা নতুন জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি যা কিছু করেছিলাম শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য। আমার স্বপ্নকে পূরণ করতে।

এই কারণেই আমি অত বেশি পার্টি বা অন্যান্য মজার জিনিস গুলো করে বেড়াই না। এখনো পর্যন্ত তার সব থেকে বেশি আবেগপ্রবণ সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনার সেই ছোট তারকাটি বলেছিলেন, যে ঠিক কতটা কষ্ট সহ্য করেও সে তার পরিবারকে ছেড়ে, সমস্ত বন্ধুদের কে ছেড়ে, সমস্ত ইনভাইটেশনকে না করে সে বিদেশ চলে এসেছিল একটা নতুন জীবন শুরু করতে।

এত ছোট বয়সেও সে এত বড় একটা ডিসিশন নিয়েছিল। কারণ একদম ছোটবেলা থেকেই তার লক্ষ্য সম্পূর্ণ পরিষ্কার ছিল। সে সব দিনই চেয়েছিল একজন মহান ফুটবলার হতে। আর অন্য কোনো কিছুই তার কাছে তার জীবনে কোনদিনই এর থেকে বেশি মূল্যবান ছিল না।

অনুপ্রেরণা ১: নিজের প্যাশনে দৃঢ় হওয়া

আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই হয়তো এটা জানেন, যে মাত্র ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি রোগ ধরা পড়ে। লোকাল পাওয়ার হাউস, রিভার প্লেট তার প্রগ্রেস এর প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিল। কিন্তু তারা তার চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে জরুরি ৯০০ ডলার খরচ করতে রাজি ছিল না।

মেসির জীবনী

কার্লস রেসজ্যাগ যিনি সেই সময় এফ সি বার্সেলোনার স্পোটিং ডিরেক্টর ছিলেন। সৌভাগ্যবশত মেসির ট্যালেন্ট সম্পর্কে অবগত হন। কারণ ওয়েস্টার্ন ক্যাটালোনিয়া লিডাতে তার কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন। যার ফলে মেসি এবং তার বাবা এফ সি বার্সেলোনা টিমের সাথে একটা ট্রায়াল অ্যারেঞ্জ করতে সফল হন।

১৩ বছর বয়সীও মেসি একটা ইউজ ন্যাপকিনে বার্সেলোনার সাথে তার প্রথম কন্ট্রাক্ট সাইন করেন। কারণ সে এতটাই উৎসাহিত ছিল যে, সে চেয়েছিল ডিনারটা শেষ হওয়ার আগেই যেন তাকে সাইন করিয়ে নেওয়া হয়। যে কারণে স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লস রেসজ্যাগ তখনই সেস্টূর‍্যান্ট এর ওয়েটারকে ডাক দেন।

তার কাছ থেকে একটা ন্যাপকিন নিয়ে তাতে একটা কন্ট্রাক্ট লিখে ফেলেন। যে ন্যাপকিনটা এখন মেসির উকিলের অফিসে ঝোলানো রয়েছে। যেটাকে বর্তমানে মোস্ট সেলিব্রেটেড পেপার ন্যাপকিন হিসেবে গণ্য করা হয়।

অনুপ্রেরণা ২: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

রাশিয়ান ক্লাব একবার মেসিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার ইউরো দিয়ে এবং আড়াইশো মিলিয়ান ইউরো দাম দিয়ে কেনার অফার করে। কিন্তু মেসি তা রিজেক্ট করে দেন। ওনার একটি সাক্ষাতকারে ওনি বলেন, “বার্সেলোনা আমার প্রান। বার্সেলোনাই আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সেখানে আমায় পৌঁছে দিয়েছে।

messi biography bangla

আমি বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে পারবনা। আমি চাইও না কোনদিন ছেড়ে যেতে। আমি জানি প্রিমিয়ার লিগ অনেক ভালো। কিন্তু আমি কোনদিন ইংল্যান্ডে খেলার কথা ভাবতে পারি না। কারণ আমার হৃদয় সবসময় বার্সেলোনাতেই পড়ে থাকবে।”

মেসির ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাটা যে ঠিক কতটা গভীর তা ভাষায় প্রকাশ করা হয়তো ভীষণই মুশকিল। ওনি একবার বলেছিলেন, “টাকা আমার কাছে কোনদিনই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল না। টাকা আমাকে কোনদিনই অনুপ্রেরণা যোগায় না। আমাকে আরো ভালো খেলতে কোনোভাবেই উৎসাহিত করে না।

কারণ হতে পারে হয়তো ধনী হওয়ার অনেক বেশি বেনিফিট রয়েছে। কিন্তু আমি শুধুমাত্র আমার পায়ে একটা ফুটবল থাকলেই খুশি। আমার অনুপ্রেরণা আসে খেলাটা থেকে, যে খেলাটাকে আমি এতটা ভালবাসি। যদি আমি একজন প্রফেশনাল ফুটবলার নাও হতাম, তাও আমি কোন কিছু ছাড়াই সারা জীবন ফুটবল খেলে যেতাম। মেসির জীবন কাহিনী এই একটা বিষয়ে আরো জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফুটবল প্রেমীদের কাছে।

অনুপ্রেরণা ৩: নিজের কাজকে ভালবাসা

হ্যা এটা সত্যি যে, মেসি অন্যান্য গ্রেট ফুটবলারদের মত অতটা লম্বাও নন, অতটা স্বাস্থ্যও ভালো না। কিন্তু তবু লিও মেসি সারা বিশ্বের সামনে একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে গিয়ে এসেছেন। প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য শরীরই না সেটা ছাড়াও যেটা অনেক বেশি জরুরী সেটা হল অদম্য মানসিক শক্তি।

মেসির সফলতা

তো যদি কখনো আপনার এরকম মনে হয়, যে আপনি হয়তো বেটে বা আপনার স্বাস্থ্য শরীর ভালো না বা আপনাকে দেখতে হয়ত কোন সিনেমার হিরোর মত না। তাহলে তখন একবার শুধু মেসির দিকে তাকান। যদি সে তার নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তাহলে আমি কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছি না যে আপনি কেন আপনার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবেন না।

একবার মেসি বলেছিলেন, আমার হাতে এখনো অনেক বছর পরে রয়েছে আরো ভালো আরো বেটার হওয়ার জন্য। সেটাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। যেদিন কোন খেলোয়াড়ের মনে হবে তার ইম্প্রূভ করার আর কিছুই বাকি নেই আমার মতে সেই দিনটি যে কোন খেলোয়াড়ের জন্য সবথেকে বড় দুঃখের দিন। তার ঠিক এই মনোভাবটিই তাকে প্রতিনিয়ত আরো ভালো হয়ে উঠতে সাহায্য করছে।

অনুপ্রেরণা ৪: নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা

মেসি তার সেটব্যাকগুলোকে ব্যবহার করেন মোস্ট রিমার্কেবল কামব্যাক হিসেবে গড়ে তুলতে। যদি কখনো আপনার মনে হয় আপনি আপনার স্বপ্ন কোনদিন পূরণ করতে পারবেন না তখন শুধু একবার এইটুকু ভাবুন, যে আপনি কেন শুরু করেছিলেন? আর তারপর যতক্ষণ না লক্ষ্যে পৌঁছাছেন ততক্ষণ অব্দি যুদ্ধ চালিয়ে যান।

মেসির জীবন গল্প

এটা হয়তো ফুটবলের ভগবানের কাছে থেকে শেখা সব থেকে বেশি ভালো একটা লাইফ লেসন। ঠিক এটাই মেসি করেছিলেন। তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য শেষ অব্দি যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

তার আর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “তৈরি থাকো তোমাকে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হবে। তোমাকে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”

অনুপ্রেরণা ৫: হাল না ছাড়া

আমরা তাকে নিয়ে অনেক কিছু বলেছি। খবরের কাগজের হেডলাইনে তাকে অবিশ্বাস্য, অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, আশ্চর্য থেকে শুরু করে মেসি হলেন ফুটবলের ভগবান। এই অব্দিও বলা হয়েছে। এক্স বাসেলোনা কোচ পেপ গোর্ডেলিও একবার বলেছিলেন, “তার ব্যাপারে কিছু লিখে লাভ নেই। তাকে বর্ণনা করার চেষ্টা করাও বৃথা। শুধু তার খেলাটা দেখুন। আর উপভোগ করুন।”

মেসির জীবন কাহিনী লেখাটি নিজের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন স্পেশালি তাদের সাথে যারা মেসির খুব বড় ভক্ত। কমেন্ট করে আমাদেরকে জানান নেক্সট কার জীবনের উপর আপনি জিরো টু হিরো লেখা দেখতে চান। কারণ আপনাকে সাহায্য করতে পারাটাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন- মালির ছেলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *