ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি

ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি টিপস – বিশ্ববিদ্যালয় | মেডিকেল | ইঞ্জিনিয়ারিং

ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি টিপস: তোমরা যারা এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার কথা ভাবছ তাদের জন্য আজকের আয়োজন। যারা নার্সিং বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জানতে চাও তাদের জন্য কিছু টিপস আছে।

তোমাদের ভালোভাবে বোঝানোর সুবিধার্থে ৩ টি ধাপে বলব এবং ভুলগুলি ধরিয়ে দিব। ধাপগুলো হল – প্রথম কি নিয়ে প্রস্তুতি নিব? দ্বিতীয়ত, কোথায় কোচিং করব? তৃতীয়ত কিভাবে স্মার্টলি ভর্তি প্রস্তুতি নিব? খুব মনোযোগ দিয়ে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা কর, যাতে ভবিষ্যতে কোন ভুল না হয়।

কি বিষয়ে ভর্তি প্রস্তুতি নিব?

প্রথমে আসি কি নিয়ে পড়ব সে বিষয়ে – ভার্সিটি, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে তুমি ইচ্ছা করলেই পছন্দমত একটাকে বেছে নিতে পারবে না, কারণটা তোমার রেজাল্ট। জিপিএ বা গ্রেড এর উপর ভিত্তি করে তোমাকে পছন্দ করতে হবে।

varsity admission test 2019

প্রতিবছর এইচ এস সি বা উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফলের পর হাজার হাজার স্বপ্ন ভাঙ্গে ডাক্তার হওয়ার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিংবা ভার্সিটিতে পড়ার। যেহেতু ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্টের আগেই ভর্তি প্রস্তুতি নিতে হয় সেহেতু আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি কি বিষয়ে প্রস্তুতি নিবা, কেমন ভাবে নিবা। কারণ এক এক জায়গায় প্রস্তুতি এক এক রকম।

তুমি যদি বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট হও তবে তোমার সুযোগটা বেশি। কারণ তুমি মানবিক শাখায়ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিট ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিট। তাছাড়া বি এস সি নার্সিং ভর্তি সুযোগ রয়েছে, যেখানে সারা বাংলাদেশে ৭৬ টি প্রতিষ্ঠানে ৪১০০ আসন সংখ্যা রয়েছে।

মানবিক ও ব্যবসা শাখায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বলতে চাই – তোমাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কারণ তোমাদের সাথে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি লড়বে। ওহ! আসল কথাটা তো বলাই হল না। তোমরা হয়ত অনেকে জান যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার গ্রেড পয়েন্টের উপর ৫০ বা ১০০ মার্ক আছে যেটা ভর্তি পরীক্ষায় গণনা হবে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই মার্কসটা বিভিন্ন হয়। তবে খুশির খবর হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মার্কস ধরা হয় না। আবার একটা হতাশার খবর হল ভর্তি পরীক্ষায় পয়েন্ট টু ফাইভ মার্কের জন্য সিরিয়াল বা পজিশন ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। কোন বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে পয়েন্ট কাউন্ট করে তা আমাদের ওয়েবসাইট নিশিক্ত ডট কম এ দেয়া আছে। সাথে গ্রেড পয়েন্টের সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতার নিয়মাবলি পেয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি গাইড

তোমরা হয়ত জানো যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েটে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার মেডিক্যালের জন্য ম্যাথ লাগে না। এখন যদি তুমি শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল নিয়ে প্রস্তুতি নাও আর জিপিএ রেজাল্ট খারাপ আসে তাহলে ধরা খেয়ে যাবা। কারণ তখন আর ভার্সিটি প্রিপারেশন বা নার্সিং ছাড়া উপায় থাকবে না।

তুমি যেহেতু পরীক্ষা দিয়েছ তাই তুমি ভালো জানবা রেজাল্ট কেমন হতে পারে? আর এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নাও কি নিয়ে প্রস্তুতি নিবা। শখের বসে বা অন্য বন্ধু বান্ধবীদের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু করতে যেও না। প্রতি বছর ঠিক এই ভুলটাই করে হাজার হাজার পরিক্ষার্থী।

দোস্ত তুই ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি নিবি। আমিও নিব, এই ধরনের মানসিকতা চেঞ্জ কর। তুমি কে? তুমি কোনটা পারবে? তা তুমিই ভালো জান। তাই তোমার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বা পয়েন্টের কথা ভেবে নিজের প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নাও।

সারা বছর পড়ালেখা ঠিকমত করো নাই, ইন্টার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তারপরেও তুমি যদি ভাব ৩/৪ মাসে প্রস্তুতি নিবা সব কাভার করে ফেলবা তাহলে বলব তুমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছ। ভর্তি পরীক্ষায় কি পরিমাণ যুদ্ধ করতে হয় তা আসলে যুদ্ধে না গেলে বোঝাতে পারব না, আমি তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি না, শুধু সাবধান করে দিচ্ছি। আশা করি, তোমরা কোন ভুল ডিসিশন নিবা না।

কোথায় ভর্তি প্রস্তুতির কোচিং করব?

কি বিষয়ে প্রস্তুতি নিবা তা হলো। এবার কোথায় কোচিং করবা, কোথায় থাকবা, কি খাবা তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলব।

ভর্তি প্রস্তুতির কোচিং

এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই ছুটে আস ভালো কোচিং এ পড়তে। আর এর জন্য বেশিরভাগই ঢাকা, রাজশাহী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় আসা শুরু করে। কিন্তু প্রতিবছর অনেক মেধাবী পরিক্ষার্থী নতুন জায়গায় আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে অসুস্থ্য হয়ে যায়। টাইফয়েড ধরিয়ে ফেলে, স্বপ্নভঙ্গ হয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার।

অনেকে ভাবে বড় বড় জায়গায় কোচিং করলে প্রস্তুতি খুব ভালো হয়। নিশ্চিত চান্স পাওয়া যায়। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, তোমরা দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। পড়াশোনা পুরোটাই নিজের কাছে। কোচিং এর ভাইয়া আপুরা শুধু তোমাকে গাইড করবে। বেশি বেশি পরীক্ষা নিবে, একটা টপিকসের ধারণা দিবে। এর থেকে বেশি কিছু নয়।

আমিও এক সময় ভর্তি যুদ্ধে যাবার জন্য কোচিং করেছিলাম। সেখানেও কোচিং এর ভাইয়া আপুরা আমাকে একথাগুলো বলেছিল। তাই তোমাদের কাছে আমার ছোট্ট একটা অনুরোধ – ভর্তি যুদ্ধে চান্স পাওয়ার জন্য নিজের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিজেকেই শিখতে হবে। কোচিং এর পিছনে বেশি ছুটো না। সেখান থেকে নোট, বই, গাইডলাইন নাও, পরীক্ষা দিয়ে দেখ তোমার অবস্থা। কিন্তু বাসায় নিজে নিজে পড়। বাসায় নিজে না পড়লে কিচ্ছু হবে না যোদ্ধা।

দিনে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাও, পুষ্টিকর খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি খাও, বাইরের খাবার পরিহার কর। সুস্থ সবল না থাকলে পরীক্ষা দিবা কিভাবে?

কিভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিব?

এবার ভর্তি প্রস্তুতি নেয়ার স্মার্ট কিছু উপায় বলি – বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের বিগত ১০ বছরের প্রশ্নব্যাংক সংগ্রহ কর বা কোচিং থেকে নাও। প্রথমে মূল বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় খুব ভালোভাবে আয়ত্ত কর এবং সমস্যা দূর করে নাও। তারপর প্রশ্নব্যাংক সলভ কর। এই প্রশ্নব্যাংক থেকে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন হুবহু কমন আসে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ম্যাথমেটিক্যাল সূত্র, সমীকরণ, সংজ্ঞা, উদাহরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি গাইড

মানবিক শাখায় সংজ্ঞা, সাল, উদাহরণ, পার্থক্য ও ইংরেজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যবসা বিভাগের ক্ষেত্রেও একই। তোমাকে যে যেভাবেই বোঝাক না ক্যান মূল বইয়ের কিন্তু কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখকের বই নিয়ে যারা চিন্তিত তাদেরকে বলি – তোমরা যে কোন একটি বা দুইটি রাইটারের বই পড়।

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সব বইয়ের কমন টপিকসগুলো থেকেই আসে। ভর্তি পরীক্ষায় যেহেতু ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ তাই ক্যালকুলেটর লাগে এরকম বড় ম্যাথগুলো বাদ দাও। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত পরীক্ষায় ব্যবস্থা করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে আগে থেকে জেনে নাও।

নার্সিং প্রস্তুতি

Bsc in nursing এ যাদের পড়ার ইচ্ছা বা কোথাও চান্স হচ্ছে না তারা নার্সিং এ চেষ্টা করতে পারো। নিঃসন্দেহে নার্সিং বর্তমানে খুব ভালমানের পেশা এবং চাকুরীর বাজারও বেশ ভালো। সারাদেশে নার্সিং পড়ার ৪১০৫টি আসন রয়েছে। এবারের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পেতে এই ওয়েবসাইট (bnmc.gov.bd) এ যাও। সেখানে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবে। গতবারে ভর্তির ন্যূণতম যোগ্যতা ছিল এস এস সি ও এইচ এস সি মিলে মোট পয়েন্ট।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন আপডেট আমাদের নিষিক্ত নামের এন্ড্রয়েড এপসটিতে পয়ে যাবে।

শেষকথা

সবশেষে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভর্তি যুদ্ধে চান্স না পেলে হতাশ হবা না। জানি অনেক কথা, তাও শুনতে হবে তোমাকে , কিন্তু জীবন এখানেই থেমে নয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী হলেই যে জীবন সফল তা মোটেও নয়। তাই লেগে থাক। কারণ লেগে থাকার নামই সফলতা।

সেকেণ্ড টাইম প্রস্তুতি নাও বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও। বিসি এস, নিবন্ধন সহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও। উদ্যোক্তা হও, কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং কর। আমিও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি এবং ফ্রিল্যান্সিং করছি। জীবনে এরকম শত শত দরজা তোমার জন্য খোলা আছে।

শুধু চোখ কান খোলা রেখে কাজে লাগো, সফল তুমি হবেই। আজ এ পর্যন্তই, কারো কোন বিষয় জানার থাকলে কমেন্ট করো। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক করে বন্ধুদেরকেও ভুল থেকে বাচার জন্য শেয়ার কর। আমাদের সাথে থাকতে চাইলে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল বাটনটি বাজিয়ে দিন। শুভকামনা রইল সবার জন্য।

আরো পড়ুন- এইচ এস সি ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *