ব্ল্যাকহোল রহস্য

মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোল রহস্য কিভাবে সৃষ্টি হয়

ব্ল্যাকহোল রহস্য: ছোট থেকে বিজ্ঞান বইয়ে ব্লাকহোলের কথা আমরা সবাই পড়ে আসছি। এতদিন এটা আমরা আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিংয়ের থিউরি বা প্রবাবিলিটি হিসেবে পড়ে এসেছি। অনেকে এটা নিয়ে আবার মজা করে বলেছিল ব্লাকহোল শুধু একটা স্বপ্ন মাত্র। কিন্তু সবার মুখ বন্ধ করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্কোপ কলাবরেশন।

দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, ১২ হাজার সিমুলেসন, ২০০ জন বিজ্ঞানী নিয়ে ১০ এপ্রিল ২০১৯ এ প্রথম ব্লাকহোলের ছবি আমরা পাই। যা বিগত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, টুইটার ও বিভিন্ন মিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্ব বা ব্ল্যাকহোল রহস্য

এখন প্রশ্ন হল- চৌদ্দশত বছর আগে কুরআন কি ব্লাকহোল নিয়ে কিছু বলেছে? উত্তর হ্যাঁ, আমি কুরআনের তিনটি আয়াত থেকে রেফারেন্স দিব ও ব্যাখ্যা করব। তবে তার আগে আমাদের সংক্ষেপে জানা উচিত ব্লাকহোল কি জিনিস? এটা কিভাবে কাজ করে? কিভাবে বিজ্ঞানীরা এই ব্লাকহোলের ছবি তুলল?

কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্ব

তাদের এই ছবি কি সত্যি নাকি ইডিটিং মাত্র! ব্লাকহোল নিয়ে মোটামোটি জেনে যদি কুরআনের আয়াতগুলো বুঝেন এবং কেন এই আয়াতগুলো আছে তা জানেন, তাহলে আপনি বিষয়টি একদম ক্লিয়ার হবেন এবং এর ভবিষ্যৎ গুরুত্বটা বুঝতে পারবেন। তাই অনুরোধ রইল একটুও না কেটে ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত দেখার। কথা দিলাম, আপনি থ মেরে যাবেন।

ব্লাকহোল কিভাবে সৃষ্টি হয়?

আসলে ব্লাকহোল হল অন্ধকার জগত যেখানে আলো হারিয়ে যায়। সূর্যের চেয়েও যদি কয়েকশ গুণ বড় নক্ষত্রের আলো ব্লাকহোলের উপর এসে পড়ে তবুও সব আলো হারিয়ে যাবে। কোথাও কোন আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ খুজে পাবেন না। ব্ল্যাকহোল রহস্য এটা দিয়ে শুরু।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন যে- মহাবিশ্বে এমন পদার্থ আছে যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি এবং নক্ষত্র গুলো এর অভিকর্শজ বলের দ্বারা চালিত হচ্ছে। আমাদের সুর্যকে কেন্দ্র করে যেমন অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে তেমনি মহাবিশ্বে অসংখ্য ব্লাকহোলকে কেন্দ্র করে নক্ষত্র গুলো ঘুরছে।

ব্ল্যাক হোলে কেন সবকিছু হারায় এবংকালো

নক্ষত্র গুলোর একটা নিজস্ব জীবনকাল থাকে তারপর একসময় নক্ষত্রের মৃত্যু হলে তা ব্লাকহোলে এসে পতিত হয় এবং একেবারে হারিয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল- ব্ল্যাক হোল কেন ব্লাক বা কালো? কারণ যেখানে আলো হারিয়ে যায় বা আলোর অনুপস্থিতিকে আমরা অন্ধকার বলি, তাই যে হোল বা গর্তে আলো হারিয়ে যায় বা নেই সেটাতো কাল হবেই।

এবার প্রশ্ন হল- কেন ব্লাকহোলে সবকিছু হারিয়ে যায় এমনকি আলোও? কারণটা অভিকর্শজ বল। এখানে এই বল এতটাই বেশি যে কোন বস্তু বা মাছ এর ভিতরে একবার প্রবেশ করলে সেটা আর ফিরে আসে না।

ব্লাকহোলের পাশে এত আলো কেন?

সবে বুজলাম কিন্তু ব্লাকহোলের পাশে এত আলো কেন? কারণ খুব সিম্পল- কোন বস্তু ব্ল্যাকহোলে সরাসরি পতিত হয়না, এর এক্রেশিয়েন ডিস্ক বরাবর আলোর গতিতে ঘুরতে থাকে।

যার জন্য উত্তাপ তৈরি হয় আর উত্তাপ থেকে আলোর। যেমনঃ গরম লোহা উত্তপ্ত হয়ে উজ্জ্বল লাল আলো দেয় তেমনি এর মধ্যে যত বস্তু এভাবে প্রদক্ষিণ করবে এই উজ্জ্বলতা ততো বাড়তে থাকবে।

ব্ল্যাক হোল তথ্য

আর এই প্লাজমাই যখন প্রদক্ষিণ করতে করতে আমাদের মুখী হয় তখন তা বেশি উজ্জ্বল হয় এবং আমাদের থেকে বিপরীতে প্রদক্ষিণ করতে থাকলে তার উজ্জ্বলতা কম হয়। ঠিক এ কারনেই উপরের আলো নিচের আলো অপেক্ষা কম উজ্জ্বল।

আর এই সবকিছুর একদম মধ্যে যেই কালো জায়গা টা বিদ্যমান। এটাই হলো ব্ল্যাকহোল। থাক ব্ল্যাকহোল নিয়ে আর বকবক না করি, এবার আমরা ১০ এপ্রিল ২০১৯ এ M87 গ্যালাক্সিতে তোলা ব্ল্যাকহলের ছবি নিয়ে সামান্য জানব তারপর কুরআনের ব্যাখ্যা।

ম্যাসিয়ার গ্যালাক্সিতে ব্লাকহোলের নামকরণ

M87 গ্যালাক্সিতে যে ব্লাকহোলের ছবি আমরা পেয়েছি তার নাম “Powehi” যার মানে- Dark source of unending creation অর্থাৎ অফুরন্ত সৃষ্টি হতে অন্ধকারের উৎস।

একটা ব্লাকহোলের সাইজ এত্ত এত্ত বড় যে কয়েক হাজার পৃথিবীর সমান টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা সম্ভব না তার উপর আবার এটা পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাহলে প্রশ্ন হল কিভাবে এর ছবি বিজ্ঞানীরা তুলল?

কিভাবে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা হয়েছে?

আসলে এটা বুদ্ধির খেলা এবং একশ বছরের পরিশ্রমের ফসল। M87 বা ম্যাসিয়ার-৮৭ গ্যালাক্সির ব্ল্যাকহোলে প্রায় ১ বছর যাবৎ নজর রাখার ফলে ১.৩ মি.মি. রেডিও ওয়েভ কে বার বার রেকর্ড করা হয় যা মেগাবাইট বা গিগাবাইটে নয় বরং পেটাবাইটে ছিলো।

কিভাবে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা হয়েছে

কিন্তু এই বিভিন্ন টেলিস্কোপ দ্বারা সংগৃহীত ডেটাগুলো একসাথে করা খুব জরুরি ছিলো। তবে, এই বিশাল পেটাবাইটের ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্থানান্তর খুবই কষ্টসাধ্য বা প্রায় অসম্ভব। এজন্যই, একে হার্ড ডিস্কের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। সাউথ পোলে অবস্থিত টেলিস্কোপ থেকে বিরুপ আবহাওয়ার কারনে ডেটা কালেক্ট করতে দেরি হয়ে যায়,তা না হলে আরো আগেই হয়তো আমরা ছবি পেয়ে যেতাম।

এরপর এটার সব ডেটাকে একত্র করে সুপার কম্পিউটার এ রাখা হয় এবং ডেটাগুলো রিকন্সট্রাক্ট করা শুরু হয় এবং তারা সফলও হোন। কিন্তু তারা একদম ১০০% সঠিকভাবে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। তাই তারা অনেক রিসার্চার্সদের দিলেন যাতে তারাও পুনরায় রিকন্সট্রাক্ট করে।

সৌভাগ্যবশত সকলের দ্বারা নির্মিত ছবি হুবুহু একই রকম আসে। প্রায় ২০০ এস্ট্রোনমারের সকল রিসার্চসমূহ ৬ টি আলাদা আলাদা পেপারে ধারন করে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল অবশেষে ঘোষণা দেওয়া হলো যে,”আমরা ব্ল্যাকহোলের একদম ১০০% আসল ছবি তুলে ফেলেছি।” এই হলো সেই ছবি। তার মানে আমাদের ধারণা করা ব্ল্যাকহোলের চিত্র সঠিক ছিল। বাস্তবে রূপ নেয় ব্ল্যাকহোল রহস্য।

ব্লাকহোল সম্পর্কে কোরআন

আমি শপথ করছি, নক্ষত্রসমূহের পতিত হওয়া স্থানের। সূরা ওয়াকিয়াঃ (৫৬:৭৫)

আমি শপথ করি, গোপন হয়ে যাওয়া তারকা বা নক্ষত্রের। সূরা তাকভীরঃ (৮১:১৫)

কিয়ামতের বিষয় অত্যন্ত জ্বোর দিয়ে আল্লাহ্‌ নক্ষত্রসমূহের পতিত হওয়া স্থানের কসম খেয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে নক্ষত্রসমূহের পতিত হয় ব্ল্যাকহোলে এবং মজার বিষয় হল ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে ধারণা ও এর মধ্যে নক্ষত্রসমূহের পতিত হবার বিষয় মাত্র দেড়শ থেকে দু’শ বছর আগে জানা যায়। আর কুরআনের এই আয়াত নাযিল হয় ১৪শ বছর আগে।

আবার সূরা তাকভীর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে “যখন নক্ষত্রসমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে।

তাহলে উপরের তিনটি আয়াত নক্ষত্রের মৃত্যু ও নক্ষত্রের পতিত হওয়া স্থান ব্ল্যাকহোলের কথা বলছে।

এতখন যে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম তা নিয়ে রিসার্চ করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, সময় দিতে হয়েছে। এর বিনিময়ে ভিডিওটিতে একটা লাইক আশা করতে পারি তো নাকি? আর ভাল লাগলে চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে এই আশ্চর্যকর বিষয়টি জানিয়ে দিন।

আরো জানুন- বছরের সেরা ৫টি প্রযুক্তি আবিষ্কার যা কল্পনাকে হার মানাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *