হোয়াটস্যাপ মেসেজ

হোয়াটস্যাপ মেসেজ প্লাটফর্মের সফলতার যাত্রা

হোয়াটস্যাপ মেসেজ প্লাটফর্মের সফলতার যাত্রা- হোয়াটস্যাপ (Whatsapp) হলো প্লে স্টোর এর সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া এপস। ব্যায়ান অ্যাকশন ও জ্যান কউম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তাঁদের এই সফলতার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না, তাহলে কেমন ছিল তাঁদের জীবনী। চলুন হোয়াটস্যাপ প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকশনের নিজের মুখ থেকে-

আমরা প্রথম ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে ফেসবুক ও টুইটারে গিয়েছিলাম কাজের সন্ধানে। কিন্তু সেখানেও আমরা রিজেক্ট হয়েছিলাম। এ অবস্থায় চাকরি না পেলে মানুষ যে হতাশায় পড়ে তা আমাদের মধ্যেও এসেছিল। কিন্তু নতুন এক উদ্যমে আমরা আবারও সিদ্ধান্ত নেই যে, চাকরী করব না, নিজেই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করব।

আর এভাবেই শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ এর পথচলা। নিজেদের জীবনের এক টার্নিং পয়েন্টে গুল্পগুলো বলতে গিয়ে এই কথাগুলো বলেছেন Whatsapp এর প্রতিষ্ঠাতা Brian Action (ব্রায়ান অ্যাকশন) ও Jan Koum (জ্যান কউম)।

আজকে আমরা তাদের জীবনের চড়াইউতড়াই পার করে সফলতায় পৌছানোর গল্পগুলো জানবো –

জ্যান কউম (Jan Koum) এর জীবনী

১৯৯২ সালে ইউক্রেনে চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা। তখন Jan Koum এর বয়স ছিল ১৬। ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার মা ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। এখানে Jan Koum একটি মুদির দোকানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতো। তার মা আয়া হিসেবে বাচ্চাদের দেখাশুনা করতো।

Jan Koum

এসময় সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে তার মা San Jose State স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা করায় কিছুদিনের মধ্যেই Jan Koum স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়। ১৮ বছর বয়সে তার কম্পিউটার প্রোগামিং এর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। দারিদ্রতার কারণে তার পক্ষে কম্পিউটার প্রোগামিং শেখার সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল ব্যবহৃত বইয়ের দোকান থেকে বই নিয়ে আসা এবং পড়ার পড়ে সেগুলোকে ফেরত দিয়ে আসা।

এভাবে তিনি স্বশিক্ষায় কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। স্কুল থেকে স্নাতক ড্রিগ্রী লাভ করে তিনি জেন জোসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। জীবিকা ও শিক্ষা দানের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তিনি আর্নেস্ট এন্ড ইয়াং এ কম্পিউটার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরীক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

ব্রায়ান অ্যাকশন (Brian Action) এর জিবনী

Brian Action এর জন্ম ১৯৭২ সালের ১৭ই ফেব্রূয়ারী আমেরিকায়। তিনি মিসিগানে তার শৈশব দিন গুলো কাটিয়েছেন এবং ফ্লোরিডাতে তার সৎ বাবার সাথে বড় হয়েছেন। তার মা ছিলেন একটি মালবাহী শিপিং কোম্পানির পরিচালিকা। ছোটবেলা থেকেই ব্রায়ান তার মায়ের কাছ থেকে ব্যবসা দক্ষতা পরিচালনা করার জ্ঞান অর্জন করেছেন।

brian action life story

স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি অ্যাডোব সিস্টেম ও অ্যাপলের পণ্য পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি Yahoo তে যোগদান করেন। এ সময় Jan Koum এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

দুইজনে yahoo তে কাজ করলেও নিজের কোম্পানি প্লান বাস্তবায়ন করার জন্য yahoo মত বড় কোম্পানি ছেড়ে দেন। শুরুতে সফলতা না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়ে এবং পুনরায় চাকুরীর জন্য চেষ্টা শুরু করে। ২০০৯ সালে ফেসবুকে চাকুরীর জন্য Brain Action ও Jan Koum আবেদন করেন। কিন্তু ফেসবুক তাদের Reject করেছিল। এরপর দুজনে Twitter এ এপ্লাই করেন, এখানেও তারা রিজেক্ট হন।

সফলতার উপলব্ধি

আজকের যুগে বেশিরভাগই চাকুরীর আশায় অনেক ছুটাছুটি করে এবং এক সময় ব্যর্থতায় পড়ে হতাশ হয়ে যায়। কিন্তু Brain Action নতুন আশা ও উদ্যম নিয়ে মনস্থির করেন। যে সে অন্য কারো কোম্পানিতে চাকুরী করবে না, নিজেই কোম্পানি খুলবে।

whatsapp startup story

এরপর ২৪ ফেব্রূয়ারি ২০০৯ সালে জ্যান কউম ও ব্রায়ান এক্টনের হাত ধরেই প্রথম বাজারে আসে হোয়াটসঅ্যাপ। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ১০০ কোটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ ডাউনলোড হয়।

তখন হোয়াটসঅ্যাপে কাজ করতেন সংস্থার কর্ণধারসহ মাত্র ৫ জন কর্মী। ১৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৫ সালে ফেসবুক প্রায় ১৫০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয়। এই সময়ে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার করে যত সংখ্যক মেসেজ পাঠানো হচ্ছে তা সারা বিশ্বে টেলিকমে এসএমএসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে! বর্তমানে সারা বিশ্বে Whatsapp ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়ন।

আরো পড়ুন- গুগল সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠাতার সফলতা | ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *